৭ বৈশাখ ১৪৩২ মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫
৭ বৈশাখ ১৪৩২ মঙ্গলবার ২২ এপ্রিল ২০২৫

বারুইপুরে ধুঁকছেন অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের কারিগররা

High News Digital Desk:

বারুইপুরে ধুঁকছেন অস্ত্রোপচারের যন্ত্রের কারিগররা:-

অস্ত্রোপচারে ব্যবহৃত সামগ্রী তৈরিতে গোটা দেশে বিখ্যাত ছিল দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর| সেখানকার গ্রামীণ এলাকার ঘরোয়া কারখানায় তৈরি সার্জিক্যাল সামগ্রী ব্যবহৃত হত দেশের বড়-বড় হাসপাতালে| সেই ছবি বদলে গিয়েছে গত কয়েক বছরে| বর্তমানে এই শিল্প ভীষণভাবে ধুঁকছে| সরকারি তরফে চেষ্টা করা হলেও, তা কার‌্যকর হয়নি বলেই অভিযোগ| গ্রামীণ এই শিল্প আদৌও বাঁচবে কিনা, পঞ্চায়েত ভোটের আগে সেই প্রশ্নই তুলছেন এলাকার মানুষজন| বহু বছর আগে ব্রিটিশ আমলে কিছুটা ঘটনাচক্রেই বারুইপুরে অস্ত্রোপচারের সামগ্রী তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল| স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সেই সময়ে বিভিন্ন এলাকায় রেলপথ তৈরি হচ্ছিল| রেলপথে ব্যবহারের জন্য বিশেষ এক ধরনের লোহার গজালের চাহিদা ছিল খুব| বারুইপুরের কল্যাণপুর ও সংলগ্ন কিছু এলাকার মানুষ কামারশালা খুলে ওই গজাল তৈরির কাজ শুরু করেন| সেই সময়ে এক ব্রিটিশ চিকিত্সকের ঘোড়ার অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন হয়| কিন্তু তার প্রয়োজনীয় যন্ত্র এদেশে মিলত না| কল্যাণপুরের এক ব্যক্তি বিবরণ শুনে তাঁর উদ্ভাবনী ক্ষমতা কাজে লাগিয়ে নিজের কামারশালায় সেই যন্ত্র বানিয়ে দেন| যা খুবই পছন্দ হয় ওই ব্রিটিশ চিকিত্সকের| পরবর্তীকালে কল্যাণপুরের ওই ব্যক্তি আরও যন্ত্র তৈরির বরাত পেতে শুরু করেন| এভাবেই স্থানীয় কামারশালায় শুরু হয় অস্ত্রোপচারের সামগ্রী তৈরির কাজ| ক্রমশ আশপাশের অন্যান্য কামারেরাও এই কাজে সহযোগীতা করতে শুরু করেন| ইতিমধ্যে ভারত স্বাধীন হয়| পরবর্তী ৫০ বছরে সার্জিক্যাল শিল্পের হাত ধরে এই এলাকার গ্রামীণ অর্থনীতিতে আমূল বদল আসে| বারুইপুরের কল্যাণপুর পঞ্চায়েত এলাকাকে সার্জিক্যাল শিল্পের আঁতুড়ঘর ধরা হয়| সেখানে কার‌্যত ঘরে ঘরে অস্ত্রোপচারের সামগ্রী তৈরির কারখানা গড়ে ওঠে| আশপাশের পঞ্চায়েতগুলিতেও শুরু হয় কাজ| ক্রমশ প্রায় ৫০০-৭০০টি ছোট-বড় কারখানা তৈরি হয় এলাকায়| শুরু হয় কয়েকশো ধরনের অস্ত্রোপচারের সামগ্রী তৈরি| সেই সামগ্রী সরবরাহ শুরু হয় দেশ এবং দেশের বাইরেও| বদলে যায় এলাকার কর্মসংস্থানের চিত্র| বারুইপুর সহ আশপাশের এলাকার বহু তরুণ সার্জিক্যাল শিল্পের সঙ্গে যুক্ত হন| কারিগরি উত্কর্ষতার দিক থেকেও এখানকার তৈরি সামগ্রী এগিয়ে ছিল অনেকটাই| কিন্তু পরবর্তীকালে কমতে কমতে এখন কার‌্যত ধ্বংসের মুখে সার্জিক্যাল শিল্প| বর্তমানে এলাকায় কারখানার সংখ্যা ১০০-রও কম| বড় কারখানা হাতে গোনা| নতুন প্রজন্ম আর এই কাজে আসছেই না|
কেন পিছিয়ে পড়ছে এই শিল্প? শিল্পের সঙ্গে যুক্ত মানুষজনরা জানাচ্ছেন, লোহা বা ইস্পাত থেকে এক-একটি সামগ্রী তৈরির মূলত দুটি ধাপ| একটি ধাপে প্রযুক্তির সাহায্য লাগে| অন্য ধাপটি শৈল্পিক নৈপুণ্য ও কারিগরি দক্ষতার ওপরে নির্ভরশীল| কারিগরি দক্ষতায় বরাবরই এগিয়ে বারুইপুরের শিল্পীরা| কিন্তু, তাঁরা মার খাচ্ছেন প্রযুক্তিগত দিক থেকে| গ্রামের ছোট কারখানায় বসে উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্র ব্যবহার সম্ভব হচ্ছে না| শিল্পীরা জানাচ্ছেন, উন্নত প্রযুক্তির যন্ত্রের জন্য প্রয়োজন প্রচুর অর্থ| তা সরকারি সাহায্য ছাড়া সম্ভব নয়| দীর্ঘদিন ধরে এখানকার শিল্পীরা সরকারি সাহায্যের আবেদন করে আসছেন| বাম আমলে কেন্দ্রের সহযোগিতায় একটি ভবন তৈরি করে কিছু যন্ত্র কিনে শিল্পীদের সাহায্য করার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছিল| বিদেশ থেকে বিশেষজ্ঞদের এনে প্রযুক্তিগত সাহায্যের পরিকল্পনাও হয়েছিল| কিন্তু আখেরে তেমন লাভ হয়নি বলে অভিযোগ| ২০১১ সালে তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় এসে সার্জিক্যাল শিল্প বাঁচাতে নতুন করে উদ্যোগী হয়| বহু টাকা ব্যয়ে তৈরি করা হয় কমন ফেসিলিটি সেন্টার| কিন্তু এত দিনেও সেই কেন্দ্র চালু হয়নি| যদিও প্রশাসন সূত্রের দাবি, আধুনিক যন্ত্রপাতি সহ ওই কেন্দ্র প্রায় তৈরি| যত শীঘ্র সম্ভব সেটি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে|

Scroll to Top