মুম্বই : দেশের শেয়ার মার্কেট থেকে টাকা তুলে বিদেশে সরিয়েছে আদানি গ্রুপ| আর তার জন্য ভারতের বিনিয়োগকারীদের প্রলুব্ধ করতে নিজেদের শেয়ারদরে ব্যাপক কারচুপি! স্টক মার্কেটে কৃত্রিম ভাবে দর তুলে রেখে বিনিয়োগ টানা হয়েছে ও বিনিয়োগকারীদের সেই টাকা বিনোদ আদানির (গৌতম আদানির ভাই) নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানি বারমুডার সংস্থায় সরিয়েছে| পরে তার অনেকাংশ আবার মরিশাসের সংস্থায় বিনিয়োগ করা হয়েছে|
বিশ্ব জুড়ে বিনিয়োগ সংক্রান্ত গবেষণার জন্য প্রসিদ্ধ মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের (Hindenburg Research) সাম্প্রতিক রিপোর্ট থেকে উঠে আসা এমন অভিযোগই চমকে ওঠার পক্ষে যথেষ্ট| কিন্তু তার চেয়েও অনেক বড় চমক, বস্তুত আতঙ্ক, অপেক্ষা করে ছিল ভারতবাসীর জন্য| নিজেদের এক্স (X) হ্যান্ডলে তার ইঙ্গিতও দিয়েছিল হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ| গত শনিবার হুইশলব্লোয়ার ডকুমেন্টসের তথ্য সামনে এনে মার্কিন গবেষণা সংস্থাটি আঙুল তুলেছে খোদ সেবির চেয়ারপারসনের দিকে| তাদের দাবি, এদেশের সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড তথা সেবির চেয়ারপারসন মাধবী পুরী বুচ স্বয়ং অতীতে বারমুডা ও মরিশাসের ওই ২ সংস্থার আর্থিক অংশীদার ছিলেন| পরে, ২০১৭-য় সেবিতে নিযুক্ত হওয়ার অব্যবহিত পূর্বে মাধবী পুরী বুচের ওইসব স্টেক তাঁর স্বামী ধবল বুচের নামে বদলে ফেলা হয়| ২০২২-এ সেবির চেয়ারপারসন হন মাধবী| তার ১ বছর গড়াতে না গড়াতে আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে শেয়ারমূল্য কারচুপির অভিযোগ আনে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ| স্বভাবতই বিষয়টি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব বর্তায় সেবির উপর| কিন্তু আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে তেমন কিছ খুঁজে পাওয়া যায়নি বলে সুপ্রিম কোর্টকে জানিয়েছিল সেবি| বিশেষত আর্থিক ওই দুর্নীতিতে আদানি-নিয়ন্ত্রিত কোনও বিদেশি সংস্থার হদিশই নাকি পাওয়া যায়নি| জানিয়েছিল সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ বোর্ড| এখন হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের সাম্প্রতিক রিপোর্ট সামনে আসার পর উঠছে সঙ্গত প্রশ্ন, যার চেয়ারপারসনই অতীতে আদানির নিয়ন্ত্রণাধীন ধোঁয়াশাবৃত বিদেশি সংস্থার অংশীদার ছিলেন, সেই সেবি আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ কতটা স্বচ্ছতার সঙ্গে খতিয়ে দেখবে?
শনিবার হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের রিপোর্ট প্রকাশ্যে আসার পর থেকে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে খড়্গহস্ত হয়েছেন বিরোধীরা| তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র তো বটেই, লোকসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি সহ বিরোধী দলগুলির একাধিক নেতা তুলোধোনা করছেন আদানি-ঘনিষ্ঠ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে| তবে সোমবারের পরিবর্তে ৩ দিন আগে, শুক্রবার সংসদের উভয় কক্ষে অধিবেশন সমাপ্ত হয়ে যাওয়ায় এই নিয়ে লোকসভা বা রাজ্যসভায় সোচ্চার হওয়ার সুযোগ হারিয়েছেন কংগ্রেস, তৃণমূল, আপ, শিবসেনার সাংসদরা| কোনওরকম আভাস পেয়েই কি তবে পরিকল্পনা-মাফিক অধিবেশনে ইতি টানা হয়েছে? উঠেছে এমন প্রশ্নও|
সেবির চেয়ারপারসন মাধবী পুরী বুচ ও গৌতম আদানি অবশ্য সব অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন| তাতে জলঘোলা হওয়ার পরিস্থিতির কোনও হেরফের হয়নি| এক্স (X) হ্যান্ডলে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ সেবির চেয়ারপারসনকে সবরকম আর্থিক তথ্য জনসমক্ষে আনার চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে এরই মধ্যে|
