ভোট আসে-ভোট যায়, প্রতিশ্রুতি রয়ে যায়, আদিবাসীদের জীবনযাত্রা যে তলানিতে ছিল সেই তলানিতেই :-
সুন্দরবনের একেবারে প্রান্তিক এলাকা নগেন্দ্রপুর| দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার রায়দিঘি থানার অন্তর্গত নদী-উপকূলীয় এলাকা নগেন্দ্রপুর| এই নগেন্দ্রপুরেই বংশ পরম্পরায় বহুবছর ধরে বসবাস করে আসছে প্রায় ৫০টি আদিবাসী পরিবার| এখানকার আদিবাসী পরিবারের মানুষরা অত্যন্ত কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেন| দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মতো এখানেও সমাজের কাছে অবহেলিত এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন| বরাবরই তাঁরা সরকারি সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত| এই সকল আদিবাসী পরিবারের মহিলারা পাননা লক্ষীর ভান্ডার| মিলছে না বার্ধক্য-ভাতা কিংবা বিধবা-ভাতা| শিক্ষার আলো থেকেও অনেকটা পিছিয়ে এই সকল পরিবারের শিশুরা| রোজগারের তাগিদে বাড়ির পুরুষেরা চলে যান ভিনরাজ্যে| আবার কোনও কোনও পুরুষ বহুদিন ধরে পড়ে থাকেন গভীর সমুদ্রে| তাই নিজেদের পেট চালাতে কঠিন লড়াই করতে হয় এই এলাকার আদিবাসী মহিলাদের| এখানকার আদিবাসী মহিলারা সকাল থেকে বেরিয়ে পড়েন সমুদ্রপাড়ে কিংবা জঙ্গলে| নদী থেকে জাল ফেলে মাছ ধরা, জঙ্গল থেকে কাঁকড়া ধরা, জঙ্গল থেকে শুকনো জ্বালানি ভাঙ্গা এই সবকিছুই তাঁদের প্রতিদিনের প্রধান কাজ| মহিলারা নিজেরাই সমুদ্র থেকে মাছ এবং কাঁকড়া ধরে নিয়ে গিয়ে বাড়িতে রান্না করেন| রান্নার জ্বালানির জন্য এদের একমাত্র ভরসা জঙ্গল| তাই প্রতিদিন এখানকার আদিবাসী মহিলারা জঙ্গলে গিয়ে শুকনো জ্বালানি ভেঙে এনে উনুনে রান্না করে থাকেন| তবে এখানকার আদিবাসী মহিলাদের বক্তব্য, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে মান্যতা দিয়ে তাঁরা কখনওই জঙ্গল থেকে কাঁচা-কাঠ কাটেন না| কেবলমাত্র বাড়িতে রান্নার জন্য জঙ্গলের শুকনো জ্বালানিই তাঁরা সংগ্রহ করেন| নদীতে মাছ ধরা, কাঁকড়া ধরা, জঙ্গল থেকে জ্বালানি ভাঙ্গা এই সবকিছুই এখানকার আদিবাসী মহিলাদের নিত্যদিনের কাজ| বাড়ির শিশুদের কোনও কোনও দিন স্কুলে পাঠালেও অনেক সময় অভাবের তাড়নায় মাছ, কাঁকড়া ধরতে কিংবা জ্বালানি ভাঙতে শিশুদেরও সঙ্গে নিয়ে যেতে হয় জঙ্গলে| তাই এখানকার আদিবাসী পরিবারের শিশুরা অন্যান্য শিশুদের তুলনায় শিক্ষার আলো থেকে অনেকটা পিছিয়ে| তবে সারাদিনের এত লড়াইয়ের পরও তাঁরা ভোলেননি তাঁদের সংস্কৃতি| বিস্তীর্ণ রায়়দিঘি এলাকার বিভিন্ন প্রান্তে বিভিন্ন রাজনৈতিক অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে সরকারি অনুষ্ঠানে এখানকার আদিবাসী মহিলা এবং পুরুষরা তাঁদের ধর্মীয় নাচ-গান প্রদর্শন করে থাকেন| তবে অন্যান্য শিল্পীদের মতো এখানকার আদিবাসী শিল্পীরা সরকারি সাম্মানিক একেবারেই পাননা|