৪ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৪ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

পঞ্চায়েত ভোটে ১২ হাজার কর্মী পাঠাচ্ছে কলকাতা পুলিস

High News Digital Desk:

পঞ্চায়েত ভোটে ১২ হাজার কর্মী পাঠাচ্ছে কলকাতা পুলিস :

পঞ্চায়েত ভোট সামলাতে কলকাতা পুলিশের একটি বড় অংশকে জেলায় পাঠানো হচ্ছে| ফলে আগামী কদিন শহরের নিরাপত্তার বাঁধন আলগা হবে কিনা, সেই প্রশ্ন ইতিমধ্যেই উঠতে শুরু করেছে| ভোটের কাজে বাহিনীর প্রায় অর্ধেক কর্মী জেলায় চলে যাওয়ায় দিন চারেক শহরের রাস্তা কার‌্যত পুলিশশূন্য থাকার আশঙ্কা রয়েছে| লালবাজারের তরফে পরিস্থিতি সামলানোর বন্দোবস্ত করার আশ্বাস দেওয়া হলেও নজরদারির ফাঁক থেকে যাওয়ার আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না| একই সঙ্গে শহরের ট্র‌্যাফিক নিয়ন্ত্রণেও এর প্রভাব পড়বে কিনা, সেই প্রশ্নও থাকছে| কোনও থানায় পড়ে রয়েছেন সাকুল্যে ১০ জন অ্যাসিস্ট্যান্ট সাব-ইনস্পেক্টর| কোথাও সেই সংখ্যাটা টেনে-টুনে ৬, কোথাও এই কজনও নেই| থানার হোমগার্ড থেকে শুরু করে কনস্টেবলের সংখ্যার হাল আরও খারাপ| যে কজন কর্মী আছেন, তাঁদের কখনও ভিআইপিদের বাড়ির নিরাপত্তায় পাঠাতে হচ্ছে, কখনও রাখতে হচ্ছে দর্শনীয় স্থানের রোজকার দায়িত্বে| ফলে থানা চালাতে কার‌্যত বাধ্য হয়ে ডবল ডিউটি করছেন আধিকারিকরা| এভাবেই কোনওমতে শহরের নিরাপত্তার আঁটুনি বজায় রাখার চেষ্টা করা হলেও কোনও বড় ঘটনা ঘটলে কী হবে, সেই প্রশ্ন উঠছে পুলিশমহলের অন্দরেই|
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচন করাতে জেলায় ১২ হাজার পুলিশকর্মী পাঠানো হবে বলে জানিয়েছিল লালবাজার| থানা, ট্র‌্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি ডিভিশন ধরে কর্মী ও আধিকারিকদের সংখ্যা বেঁধে দিয়ে তালিকা পাঠানো হয় লালবাজারের তরফে| পুলিশ সূত্রের খবর, থানার ইনস্পেক্টর পদমর‌্যাদার আধিকারিককে ভোটের কাজে অন্য জেলায় সেভাবে পাঠানো না হলেও ডেকে নেওয়া হয়েছে হোমগার্ড, কনস্টেবল, এএসআই, এসআই-দের একটা বড় অংশকে| এর ফলে পঞ্চায়েত ভোটের নিরাপত্তার কাজে থানার প্রায় দুই- তৃতীয়াংশ কর্মী চলে গিয়েছেন| আর তার জেরে বৃহস্পতিবার থেকে বাহিনীর বাকি সদস্যরা থানার দৈনন্দিন কাজ চালাতে রীতিমতো হিমশিম খাচ্ছেন বলে দাবি| পরিস্থিতি সামলাতে কোনও থানায় পুলিশকর্মীদের সকালের ডিউটি শেষ করে ফের রাতে এসে ডিউটি ধরতে হচ্ছে, কোথাও আবার একই সঙ্গে দুবেলার ডিউটি করতে হচ্ছে| ভোটের জেরে একই অবস্থা ট্র‌্যাফিক গার্ডগুলিতেও| ভোটের কাজে গার্ডের বড় অংশের পুলিশকর্মী চলে যাওয়ায় পথের নিরাপত্তা সামলানোর দায়িত্বে থাকা কর্মীর সংখ্যা কমাতে বাধ্য হয়েছেন আধিকারিকরা| কোথাও আবার রাস্তার ট্র‌্যাফিক সামলানোর দায়িত্ব বর্তেছে সিভিক ভলান্টিয়ারের ওপর| এদিন সকাল থেকেই একাধিক রাস্তায় তুলনামূলকভাবে কম সংখ্যক পুলিশকর্মীর দেখা মিলেছে| ফলে দিনের ব্যস্ত সময়ে শিয়ালদহ, উল্টোডাঙা, ধর্মতলা, হাজরা মোড়, গড়িয়াহাট সহ শহরের গুরুত্বপূর্ণ অংশে যান-শাসনে কার‌্যত নাজেহাল হতে হয়েছে পুলিশকর্মীদের| ফাঁক এড়িয়ে চলেছে ট্র‌্যাফিক বিধি ভাঙাও| লালবাজারের এক কর্তা যদিও বলছেন, নির্বাচনের কাজে জেলায় বাহিনী গেলেও শহরে পর‌্যাপ্ত পুলিশ রয়েছে| সিসি ক্যামেরার মাধ্যমেও নজরদারি চলছে| শহরের নিরাপত্তায় ফাঁক রাখা হচ্ছে না|
নির্বাচন কমিশনের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পঞ্চায়েত ভোটে ১২ হাজার পুলিশকর্মী পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে লালবাজার| লালবাজার সূত্রের খবর, ভোটে কলকাতা পুলিশের ১০ হাজার কনস্টেবলের পাশাপাশি এসআই ও সার্জেন্ট মিলিয়ে ৫০০ জন এবং ১৫০০ জন এএসআই-কে পাঠানো হচ্ছে| ভোট মিটিয়ে তাঁদের ফিরতে ৪ দিনেরও বেশি সময় লেগে যেতে পারে| ফলে ওই কদিন শহরের নিরাপত্তায় বড় ফাঁক থেকে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেকে| থানা ও ট্র‌্যাফিক গার্ডের পাশাপাশি গোয়েন্দা বিভাগ থেকেও পুলিশকর্মী তুলে নেওয়ায় সেখানকার কাজ কীভাবে চলবে, সেই প্রশ্নও ঘুরছে বাহিনীর অন্দরেই| কোনও কোনও থানা থেকে অর্ধেকেরও বেশি কর্মীকে ভোটের জন্য তুলে নেওয়া হচ্ছে বলে খবর| বর্তমানে কলকাতা পুলিশ বাহিনীতে মোট কর্মীর সংখ্যা ২৪ হাজারের কাছাকাছি| গত কয়েক বছর ধরে নিয়োগ না হওয়ায় এমনিতেই কর্মী-সঙ্কট রয়েছে বাহিনীতে| সেইসঙ্গে বড় অংশের পদোন্নতি হওয়ায় নিচুতলার কর্মীর সংখ্যা এখন অপ্রতুল| এমন পরিস্থিতিতে অর্ধেকেরও বেশি কর্মীকে ভোটের কাজে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহল থেকে|
এর পাশাপাশি রয়েছে ট্র‌্যাফিক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত চিন্তাও| লালবাজার জানাচ্ছে, কলকাতা ট্র‌্যাফিক পুলিশের ২৫টি গার্ড থেকে ভোটের কাজে যাচ্ছেন প্রায় ৮০ জন সার্জেন্ট, ১৮০০ জন ট্র‌্যাফিক কনস্টেবল, ২০০ জন এএসআই এবং ২ হাজার হোমগার্ড| এই বিপুল সংখ্যক কর্মীর একটি বড় অংশ প্রতিদিন শহরের যান নিয়ন্ত্রণ করেন| এই অবস্থায় শহরে যান নিয়ন্ত্রণের রাশ কয়েক হাজার সিভিক ভলান্টিয়ারের হাতে থাকবে বলে অভিযোগ| যদিও ট্র‌্যাফিক পুলিশের এক কর্তা জানান, অফিসারদের বড় একটি অংশের পাশাপাশি গার্ডের ওসি এবং এসি-দের গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়ে থাকতে বলা হয়েছে| পুলিশের আধিকারিকদের মতে, শুক্রবার এবং শনিবার ট্র‌্যাফিক পুলিশের কার‌্যত অগ্নিপরীক্ষা| তবে ট্র‌্যাফিক পুলিশের একাংশের দাবি, বর্তমানে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যালের মাধ্যমে যান চলাচল নিয়ন্ত্রিত হয়| তাই বাহিনীর বড় একটি অংশ না থাকলেও যান চলাচলে তেমন প্রভাব পড়বে না|

Scroll to Top