বিজেপির (BJP) পক্ষে নতুন অস্বস্তি| ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে (Indira Gandhi International Airport) দুর্ঘটনাকে ঘিরে ফের উঠে এলো পরোক্ষ পথে পুষ্ট গেরুয়া শিবিরের অর্থ ভান্ডারের প্রসঙ্গ| তবে ইলেক্টোরাল বন্ড নয়, এবার আলোচনার কেন্দ্রে ইলেক্টোরাল ট্রাস্ট (Electoral Trust)|
বন্ডের সঙ্গে ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের ফারাক হল, এক্ষেত্রে অর্থ প্রদানকারী ব্যক্তি বা কর্পোরেট সংস্থার পরিচিতি আড়াল করা যায় না| কোন ট্রাস্টের মাধ্যমে কে বা কারা কোন দলকে কত টাকা দিল, সেসবই প্রকাশ্য তথ্য হিসেবে সংরক্ষিত থাকে| তাছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলিকে অর্থের জোগান দিতে বন্ডের মতো ইলেক্টোরাল ট্রাস্টে বিশেষ-বিশেষ উপলক্ষেরও দরকার পড়ে না| ব্যাপারটা চলে, যাকে বলে, বিনা উপলক্ষে বছর-ভর|
এখন বিজেপির মুশকিল হল, বিভিন্ন পাবলিক রেকর্ড ঘেঁটে যে হাতে-গরম তথ্য উঠে আসছে, তা তাদের পক্ষে যথেষ্ট বিড়ম্বনার| জানা যাচ্ছে, দিল্লি বিমানবন্দর দেখভালের দায়িত্ব সামলায় যে জিএমআর গ্রুপ (GMR Group), তারা ২০১৮ সালের পর থেকে প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্টের (Prudent Electoral Trust) মাধ্যমে ঘুরপথে বিজেপির ফান্ডে বিপুল পরিমাণ টাকা ঢেলেছে|
কত টাকা? সংবাদ সংস্থা রয়টার্সে (REUTERS) প্রকাশিত হিসেব অনুযায়ী, ২০১৩-র জন্মলগ্ন থেকে চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত প্রুডেন্ট নির্বাচনী ট্রাস্টে টাকার অংক ২,০০০ কোটিরও বেশি| এই বিপুল পরিমাণ অর্থের ৪ ভাগের ৩ ভাগই গিয়েছে বিজেপির দলীয় কোষাগারে| রয়টার্সের আরও দাবি, ২০১৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত দেশের বড়সড় ৮টি সংস্থা প্রুডেন্ট ইলেক্টোরাল ট্রাস্টের মাধ্যমে বিজেপিকে ৪০০ কোটির বেশি টাকা দিয়েছে, যার মধ্যে অন্যতম জিএমআর| এবং রয়টার্সের প্রতিবেদনে উল্লেখ, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি দিল্লি বিমানবন্দরের সম্প্রসারিত ১ নম্বর টার্মিনাল উদ্বোধন করেন যে সময়ে, ঠিক ১ মাস পর প্রুডেন্ট ট্রাস্টের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি অর্থ পেয়েছে বিজেপি|
গ্র্যান্ডি মল্লিকার্জুন রাও (Grandhi Mallikarjuna Rao) গ্রুপ, সংক্ষেপে জিএমআর সংস্থা, প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৭৮-এ| কালে কালে ডালপালা মেলে প্রতিষ্ঠানটি| গত ৫ বছর ধরে ভারতের বৃহত্তম ও আধুনিকতম বিমানবন্দর তথা ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর সম্প্রসারণে কার্যত নির্মাণের দায়িত্বে আছে জিএমআর এয়ারপোর্টস ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড (GMR Airports Infrastructure Limited)| শুক্রবার ভোরে সেই দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালে ছাদের একাংশ ভেঙে পড়ার পর, স্বভাবত প্রশ্নের মুখে জিএমআর|
‘প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনকে মাথায় রেখে তড়িঘড়ি নির্মাণ হয়েছে|’ তার জেরেই এমন প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা বলে আক্রমণ শানিয়েছে কংগ্রেস সহ বিরোধীরা| অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী অবশ্য দাবি করেছেন, দুর্ঘটনাগ্রস্ত অংশের নির্মাণ হয়েছিল ২০০৯ সালে| প্রধানমন্ত্রী ১ নম্বর টার্মিনালের অন্য বিল্ডিং উদ্বোধন করেন| এই নিয়ে চাপানউতোর তো চলছে! তার মধ্যে সামনে আসছে বিজেপির কোষাগার ভরানো জিএমআর-এর নির্বাচনী ট্রাস্ট প্রসঙ্গ| বিভিন্ন সূত্রে যে হিসেব পাওয়া যাচ্ছে, তাতে উত্সাহিত বিরোধীদের খোঁচা – ঝুলি থেকে বিড়ালটা সেই বেরিয়েই পড়ল!