কলকাতা : আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচারকে নিশানা করলেন তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র। নিজের এক্স (X) হান্ডলে পোস্ট করা ভিডিওয় তিনি বলেছেন, ‘এ রাজ্যের মহিলারা সকলেই ‘লাপাতা লেডিস’ কিংবা ‘গুঙ্গি গুড়িয়া’ – রাজনৈতিক স্বার্থে এমন একটা ভাষ্য চালানোর চেষ্টা হচ্ছে। আগেও এমন অপপ্রয়াস হয়েছে। আমরা সেই অপপ্রচারকে আবারও রুখে দেব।’
ভিডিও তৃণমূল সাংসদ প্রথমেই বলেছেন, ‘আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ভয়াবহ ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় আমরা সকলেই বেদনাহত। এক তরুণী কর্মক্ষেত্রে গিয়ে ৩৬ ঘণ্টার শিফট সেরে ঘুমোতে গিয়েছিলেন। সেখানে তাঁকে ধর্ষণ ও খুন করা হয়েছে। সেই বর্বরোচিত ঘটনা নিঃসন্দেহে আমাদের হতভম্ব করে দিয়েছে। নির্যাতিতার জন্য হৃদয় রক্তাক্ত হয়ে উঠেছে আমার।’
এক্স হ্যান্ডলের ভিডিওয় মহুয়া উল্লেখ করেছেন, ‘রাস্তায়-রাস্তায় প্রকৃত শোক-উদ্বেগ-ক্ষোভের যে স্বতঃস্ফূর্ত সংহত প্রকাশ ঘটছে, তা আমরা পুরোটাই বুঝতে পারছি। মহিলাদের সন্ত্রস্ত হওয়া, নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা খুবই স্বাভাবিক এক্ষেত্রে। এটা আমার সঙ্গে হতে পারত। আপনার সঙ্গেও হতে পারত। আমরা যারা নারী, আমাদের যে’কারও সঙ্গে হতে পারত। আমরা সকলেই বাড়ির বাইরে পা রাখি। আমরা এটুকু অন্তত প্রত্যাশা করতে পারি যে, আমাদের কর্মক্ষেত্রে সুরক্ষার ব্যবস্থা থাকবে। সেখানেই তৈরি হয়েছে উদ্বেগ, যার বহিঃপ্রকাশ ঘটছে রাস্তায়। আমরা বিষয়টির প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানাচ্ছি। চিকিৎসকদের নিরাপদ ও সুরক্ষিত কর্মস্থলের দাবি যুক্তিসংগত।’
এরপরই ভিডিও-বার্তায় মহুয়া মৈত্রর দাবি, ‘রাজ্য সরকার, মুখ্যমন্ত্রী ও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা ঘটনাকে পরিকল্পনা-মাফিক ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন, এমন অপপ্রচার চালানো হচ্ছে, যা সর্বৈব মিথ্যা।’ মহুয়া উল্লেখ করেছেন, ‘ঘটনার দিন মুখ্যমন্ত্রী ঝাড়গ্রামে ছিলেন। তাঁর কাছে খবর যাওয়ার পরপরই তিনি নিহত নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেছেন। কলকাতা ফেরার পর নির্যাতিতার বাড়িতে গিয়ে বাবা-মায়ের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। ১২ ঘণ্টার মধ্যে সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এখন পরবর্তী তদন্ত নির্ভর করেছে ডিএনএ পরীক্ষার উপর। সিসিটিভি ফুটেজ অথবা ডিএনএ সংক্রান্ত প্রমাণ ব্যতিরেকে এখন কাউকে গ্রেফতার করা সম্ভব নয়।’
তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র মনে করিয়ে দিয়েছেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী নির্যাতিতার পরিবারকে এও বলেছিলেন যে, আপনারা যদি রাজ্যের তদন্তে ভরসা না করেন, তাহলে সিবিআই তদন্তও হতে পারে। কলকাতা হাইকোর্ট এখন সিবিআইকে তদন্তভার দিয়েছে। রাজ্য ও কলকাতা পুলিশের সম্পূর্ণ সহায়তায় সিবিআই তদন্ত করছে।’
মহুয়ার দাবি, ‘পুলিশের কাজে কোথাও কাউকে আড়াল করার কোনও চেষ্টা ধরা পড়েনি। কেবল আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষের ভূমিকায় প্রশ্ন উঠতে পারে। তা বাদ দিলে, নির্যাতিতার পরিবারের পাশে থেকে সুবিচার পাইয়ে দেওয়ার জন্য যা যা কর্তব্য, রাজ্য সরকার সবই করেছে।’
এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করা ভিডিওয় মহুয়া বলেছেন, ‘আমরা সকলে চাইছি, যত দ্রুত সম্ভব অপরাধীরা ধরা পড়ুক। মহিলারা যাতে এই রাজ্যকে তাঁদের জন্য নিরাপদ অনুভব করেন, রিপোর্ট অনুযায়ী কলকাতাকে যাতে তাঁরা আগের মতোই দেশের সবচেয়ে নিরাপদ শহর হিসেবে গণ্য করতে পারেন, সেই আস্থাটা ফিরিয়ে আনাই এখন লক্ষ্য।’