২৩ কার্তিক ১৪৩২ রবিবার ০৯ নভেম্বর ২০২৫
২৩ কার্তিক ১৪৩২ রবিবার ০৯ নভেম্বর ২০২৫

আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নারীর চ্যালেঞ্জ: ‘এমপাওয়ার’-এর পর্যবেক্ষণ

High News Digital Desk:

নারীদের অনেকের মানসিক স্বাস্থ্য সংকটে রয়েছে। বিশ্বব্যাপী, পুরুষদের তুলনায় নারীদের উদ্বেগ এবং বিষণ্ণতায় ভোগার সম্ভাবনা প্রায় দ্বিগুণ।

ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ডস ব্যুরোর মতে, ভারতে, সমস্ত আত্মহত্যার ৩৬.৬% নারীদের। ১৮-৩৯ বছর বয়সী তরুণীরা সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ। তবুও, কলঙ্ক এবং সামাজিক নানা নিষেধাজ্ঞা সাহায্য চাইতে তাদের অসুবিধায় ফেলছে।

বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক নারী দিবসে, আদিত্য বিড়লা এডুকেশন ট্রাস্ট ‘এমপাওয়ার’ নামে একটি নিবিঢ় পর্যবেক্ষণ চালিয়েছে। নীরজা বিড়লার নেতৃত্বে ভারত জুড়ে মহিলাদের ‘নিরব সংগ্রামের উন্মোচন’-এ ফুটে উঠেছে তাদের বিস্তৃত মানসিক স্বাস্থ্য, তাদের অন্তর্দৃষ্টির নানা উপস্থাপন।

১৩ লক্ষ নারীর তথ্য নিয়ে এক বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিচালিত এই গবেষণায় কলেজ ছাত্রী, কর্পোরেট পেশাদার, গ্রামীণ নারী এবং সশস্ত্র বাহিনীর নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের সংগ্রাম তুলে ধরা হয়েছে। এর মাধ্যমে জরুরি হস্তক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা উঠে এসেছে।

পর্যবেক্ষণ সম্পর্কে বলতে গিয়ে ‘এমপাওয়ার’-এর সভাপতি পারভীন শেখ দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, “মহিলাদের মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যাগুলি প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। এটা তাদের আরও গভীর যন্ত্রণার দিকে ঠেলে দেয়। এ ধরণের তথ্য সংকট পরিমাপ, কাঠামোগত সহায়তায় এবং নারীদের সাহায্য চাওয়ায় উৎসাহিত করতে সাহায্য করে। যদি চিকিৎসা না করা হয়, তাহলে মানসিক দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা, ব্যক্তিগত ক্ষতি এবং এমনকি আত্মহত্যার দিকেও তাদের নিয়ে যেতে পারে। বিচারের ভয়ের ঊর্ধে উঠে প্রতিটি নারীরই যত্ন নেওয়ার অধিকার রয়েছে।”

মূল তথ্য— মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ: কর্মজীবনের ভারসাম্য, আর্থিক চাপ এবং সামাজিক প্রত্যাশার কারণে প্রতি ২ জনের মধ্যে ১ জন মহিলা দীর্ঘস্থায়ী চাপের কথা জানান।

ঘুমের ব্যাঘাত: ৪৭% অনিদ্রায় ভোগেন, বিশেষ করে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী মহিলাদের সুস্থতার উপর প্রভাব ফেলে।

সামাজিক বিচ্ছিন্নতা: সীমিত সামাজিক বৃত্তের কারণে ৪১% মানসিকভাবে কষ্ট পান। শিক্ষাগত এবং কর্মক্ষেত্রের চাপ: ৩৮% কর্মজীবনের বৃদ্ধি এবং আর্থিক স্থিতিশীলতা নিয়ে উদ্বেগ বৃদ্ধির মুখোমুখি হন।

জনসংখ্যা জুড়ে মানসিক স্বাস্থ্য— গ্রামীণ মহিলা: মহারাষ্ট্র সরকারের সহযোগিতায়, প্রকল্প রূপায়নের মাধ্যমে, ‘এমপাওয়ার’ ১.২৮ মিলিয়ন গ্রামীণ মহিলার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে ব্যাপক আর্থিক অস্থিরতা, সামাজিক কলঙ্ক এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবার অপ্রতুলতা সীমিত করেছে। অনেকেই হতাশা, উদ্বেগ এবং আত্মহত্যার চিন্তাভাবনার অভিজ্ঞতার কথা জানিয়েছেন, জোর দিয়েছেন এসবে হস্তক্ষেপের জরুরি প্রয়োজনীয়তার উপর। কর্পোরেট মহিলা: ৪২% হতাশা এবং উদ্বেগের লক্ষণগুলি রিপোর্ট করেন। ৮০% কর্মক্ষেত্রে মাতৃত্বকালীন ছুটি এবং কর্মজীবনের বৃদ্ধির উপর প্রথাগত বাধার মুখোমুখি হন।

সশস্ত্র বাহিনীতে নারী— পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজর্ডার, মানসিক আঘাত এবং উদ্বেগজনিত ব্যাধির উচ্চ ঘটনা। কলঙ্কের ভয় মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চাওয়াকে নিরুৎসাহিত করে। সংগ্রামের মধ্যে রয়েছে হয়রানি, পারিবারিক হিংসা এবং কর্মজীবনের ভারসাম্যের চ্যালেঞ্জ।

১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সীদের মধ্যে শহর-নির্দিষ্ট প্রবণতায় মুম্বাইয়ের ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, উচ্চ স্তরের শিক্ষাগত চাপ এবং কাজের পরিবেশ (কর্পোরেট বার্নআউট)। দিল্লির ক্ষেত্রে নিরাপত্তা উদ্বেগ এবং হয়রানি পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজর্ডার এবং উদ্বেগ বাড়ায়। কলকাতার ক্ষেত্রে একটা শক্তিশালী সামাজিক নেটওয়ার্ক থাকলেও কলঙ্কের ভয়ে অনেকে পেশাদার সাহায্য-প্রার্থনা করতে পারেন না।

অন-গ্রাউন্ড ইমপ্যাক্ট – এই পর্যবেক্ষণে মুম্বাই, দিল্লি এবং কলকাতায় নারীদের সাহায্য চাওয়ার শক্তির ফলাফল প্রতিদিন যাচাই করা হচ্ছে। আরও বেশি মহিলা মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা চাইছেন। তবে বাধা রয়েছে।

কলকাতার ‘এমপাওয়ার – দ্য সেন্টার’-এর প্রধান এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ প্রীতি পরখ জানিয়েছেন: “কলকাতা এমন একটি শহর যেখানে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতা সহাবস্থান করে। মহিলাদের প্রায়শই এর মধ্যেই প্রত্যাশা পূরণে সচেষ্ট হতে হয়। পরিবার, কর্মক্ষেত্র এবং দ্রুত বিকশিত সমাজের চাহিদার মধ্যে, তাদের মানসিক স্বাস্থ্য প্রায়শই উপেক্ষা করা হয়। উদ্বেগ, বিষণ্ণতা এবং দীর্ঘস্থায়ী চাপের মতো নানা অবস্থার ক্রমবর্ধমান প্রভাব রয়েছে। তা সত্ত্বেও এখনও তারা অবহেলিত। আমি মহিলাদের তাদের মানসিক সুস্থতাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার, প্রয়োজনে পেশাদার সহায়তা নেওয়ার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে নীরবতা ভাঙার আহ্বান জানাই। সাহায্য চাওয়া দুর্বলতার লক্ষণ নয় বরং ক্ষমতায়ন এবং স্থিতিস্থাপকতার দিকে একটি পদক্ষেপ।”

এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের সুপারিশ: সহজে মুস্কিল আসানের জন্য প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থায় মানসিক স্বাস্থ্য পরিষেবা একীভূত করুন। নারীর স্বাস্থ্যের জন্য মানসিক স্বাস্থ্যকে জনস্বাস্থ্যের অগ্রাধিকার দেওয়া দরকার। এর জন্য সরকারি সহযোগিতাকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রসবোত্তর বিষণ্ণতা নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রসবপূর্ব এবং প্রসবোত্তর চেক-আপের সময় বাধ্যতামূলক মানসিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা দরকার।

কর্মচারী সহায়তা কর্মসূচিতে মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা অন্তর্ভুক্ত করুন, যাতে মাতৃত্বকালীন ছুটি থেকে ফিরে আসা বা যাওয়া মহিলাদের উপর নজর দেওয়া হয়। একইভাবে মহিলাদের জন্য অন্যান্য স্বাস্থ্য পণ্য এবং পরিষেবাগুলিতে নারী-কেন্দ্রিক মানসিক স্বাস্থ্য তথ্য বিতরণ দরকার। মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তার জন্য মহিলাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য সহজ, গোপনীয় সহায়তা ব্যবস্থা প্রয়োজন। বিশেষ করে অল্পবয়সী মেয়েদের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে মনো-শিক্ষিত করুন। ভয় বা লজ্জা ছাড়াই তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করার ক্ষমতা দিন।

** নারীদের তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের চাহিদা মুক্তভাবে প্রকাশ করার জন্য বাড়ির মধ্যে নিরাপদ, সহায়ক স্থান তৈরি করুন।

** কর্মক্ষেত্রে এমন নীতি প্রচার করুন যা মানসিক স্বাস্থ্যকে সমর্থন করে। যার মধ্যে রয়েছে চাপ সামাল দেওয়ার ব্যবস্থাপনা এবং নমনীয় কাজের ব্যবস্থা।

** নারীদের জন্য তৈরি সমবয়সী সহায়তা গোষ্ঠী এবং মানসিক স্বাস্থ্য নেটওয়ার্কের মতো সম্প্রদায়-ভিত্তিক সহায়তা ব্যবস্থা গড়ে তুলুন।

** মানসিক স্বাস্থ্য কথোপকথন স্বাভাবিক করতে এবং মহিলাদের মধ্যে কলঙ্ক কমাতে মিডিয়া প্রচারণা চালান।

** ‘এমপাওয়ার’ বাধা ভেঙে ভারতজুড়ে নারীদের প্রাপ্য মানসিক স্বাস্থ্য সহায়তা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই ফলাফলগুলি নীতি সংস্কার, কর্পোরেট হস্তক্ষেপ এবং দেশব্যাপী মানসিক স্বাস্থ্য কর্মসূচিকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, আদিত্য বিড়লা এডুকেশন ট্রাস্টের একটি উদ্যোগ, এমপাওয়ার হল একটি অগ্রণী সামাজিক উদ্যোগ যা মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি রূপান্তরের জন্য নিবেদিত। ৮ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত, এমপাওয়ার সচেতনতা ছড়িয়ে দেওয়ার, কলঙ্ক কমানোর এবং সামগ্রিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের ক্ষেত্রে একটি অগ্রণী শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।

Scroll to Top