বাঁকুড়ার স্কুলে বৃক্ষরোপণ ঘিরে অভিনব উদ্যোগ॥ বিশ্ব-উষ্ণায়ন ঠেকাতে বাংলার স্কুলগুলিতে বৃক্ষরোপণের কথা আমরা প্রায়ই শুনি| কিন্তু সেইসব চারার ভবিষ্যত্ কী হয়, খবর রাখি কী? ঠিক এইখানেই অভিনবত্ব ছাতনার দুমদুমি গ্রামের ঘোষের গ্রাম আঞ্চলিক বিদ্যাপীঠের বনমহোৎসবের| গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি, তাদের পরিচর্যাও ভার নিল ছাত্রছাত্রীরা| রোপিত চারার রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব বেশ নতুন কায়দায় কাঁধে তলে নিল পড়ুয়ারা| বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সরোজ দে জানিয়েছেন, প্রস্তাবটা এসেছিল বিডিও সৌরভ ধল্লর থেকে| বিশ্ব জোড়া উষ্ণায়ন ঠেকাতে স্কুলের ফাঁকা জমিতে গাছ লাগানোর প্রস্তাব| তার চেয়েও অভিনব যেটা, সেটা হল ছাত্রছাত্রীর নামে ট্যাগ তৈরি করে প্রতি গাছের পরিচর্যার দায়িত্ব বণ্টন| সেই প্রস্তাব মেনে বনমহোৎসব হল ঘোষের গ্রাম আঞ্চলিক বিদ্যাপীঠে| রোপণ করা হল আমগাছের ৫০টি চারা| ৫০ জন পড়ুয়ার নাম লেখা ট্যাগ ৫০টি চারায় সুতো দিয়ে বেঁধে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হল রক্ষণাবেক্ষণের ভার|
ঘোষের গ্রাম আঞ্চলিক বিদ্যাপীঠে আমগাছের চারা-রোপণ উপলক্ষে হাজির হন খোদ বিডিও সৌরভ ধল্ল| তাঁর বক্তব্যে ফুটে উঠল চারার দেখভালের গুরুত্ব|অন্তত ১ বছর ঠিকমতো রক্ষণাবেক্ষণ করলেই চারাগাছ স্বনির্ভরতা অর্জন করে, জানালেন তিনি| বিডিও সৌরভ ধল্লর আশা, ট্যাগ লাগিয়ে চারা রোপণ ও রোপিত চারার রক্ষণাবেক্ষণে পড়ুয়াদের উৎসাহিত করার এই উদ্যোগ ব্লকের অন্যান্য স্কুলেও ছড়িয়ে দেওয়া যাবে|
বিডিও ও শিক্ষকদের সঙ্গে আমচারা লাগিয়ে যারপরনাই খুশি পড়ুয়ারা|ঘোষের গ্রাম আঞ্চলিক বিদ্যাপীঠের এক ছাত্রী জানিয়েছে, যে গাছে যার নাম লাখে থাকবে, সেই গাছটা সে পরিচর্যা করবে| স্কুলশিক্ষা শেষে এখান দিয়ে যাওয়ার সময়, রাস্তার পাশের গাছটিকে দেখে সে গর্বিত অনুভব করবে এই ভেবে যে, গাছটি সে-ই লাগিয়েছিল| স্কুলের ভাইবোনেরা বলবে, এই গাছটা এই দিদি বা দাদা লাগিয়েছে| আরেক ছাত্রী জানাচ্ছে, পরবর্তী প্রজন্মের অক্সিজেনের চাহিদা মেটাতে এই উদ্যোগ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ|
বিশ্ব-উষ্ণায়ন সহ বহু সঙ্কটের মোকাবিলায় ছাতনার বিদ্যাপীঠ নিঃসন্দেহে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করল| সবুজের উদ্বোধনের পর সবুজকে রক্ষা করাও যে জরুরি, তা নজরকাড়া এই দৃষ্টান্তে একটা গুরুত্বপূর্ণ বার্তার উচ্চতায় উঠে গেল, বলা যায়| ছাতনার সমষ্টি উন্নয়ন আধিকারিকের মতো আমরাও আশা করতে পারি, স্কুলে স্কুলে যেন ছড়িয়ে পড়ে সবুজায়ন ও সবুজ পালনের মহৎ উদ্যোগ|