আয়লা থেকে আমফান, বুলবুল কিংবা রেমাল – তছনছ হয়ে যাওয়া দক্ষিণবঙ্গের চোখ বারবার ঘুরে গিয়েছে সুন্দরবনে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্গোপসাগরের উপকূলে ম্যানগ্রোভ অরণ্য হতে পারত প্রাকৃতিক পরিত্রাতা। সমুদ্র থেকে আছড়ে পড়া ঘূর্ণিঝড়ের সামনে শক্তপোক্ত প্রাচীর বা দেওয়ালের মতো কাজ করতে পারত ম্যানগ্রোভের সারি।
কিন্তু তা হয়নি। কারণ, সুন্দরবনে যথেচ্ছ হারে ধ্বংস করা হয়েছে ম্যানগ্রোভ অরণ্য। অবৈধ কারবারিরা ম্যানগ্রোভ কেটে পাচার করেছে মূল্যবান কাঠ। কোথাও কোথাও সুন্দরবনের এই সম্পদকে নষ্ট করে বানানো হয়েছে মৎস্যচাষের জলাভূমি। এরই পরিণামে, অতীতের অনেক ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলা করা সুন্দরবন আজ অসহায়। ভবিষ্যতের সাইক্লোন আতঙ্ক ধরাচ্ছে কলকাতা সহ গোটা দক্ষিণবঙ্গে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন, কোনওভাবেই ম্যানগ্রোভ ধ্বংস করা যাবে না। তাঁর উৎসাহে এরই মধ্যে ৫ কোটি ম্যানগ্রোভের চারা রোপণ করা হয়েছে সুন্দরবন জুড়ে।
অনেকখানি ম্যানগ্রোভ অরণ্য ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় বহু নদীবাঁধ আজ দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে ফাটল। কোথাও কোথাও সম্পূর্ণ ভেঙে গিয়েছে নদীবাঁধ। এর জেরে চাষজমিতে ঢুকে পড়ছে নোনাজল। কৃষিজমির চাষযোগ্যতা হারিয়ে যাচ্ছে দ্রুত। এমতাবস্থায় বাসন্তী ব্লকের ঝড়খালি গ্রাম-পঞ্চায়েতের হেড়োভাঙা মৌজায় ত্রিদিব নগর বালিখাল বাজার সংলগ্ন এলাকায় রোপণ করা হল ম্যানগ্রোভের কাঁকড়া প্রজাতির চারা।
কারা করলেন এ’কাজ? জয়গোপালপুর গ্রাম বিকাশ কেন্দ্রের উদ্যোগে ম্যানগ্রোভের বিশেষ প্রজাতির চারা রোপণ করলেন স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলারা। উদ্যোগকে সাধুবাদ। কেননা, সুন্দরবনের প্রান্তিক মানুষের কাছে দুর্যোগের দিনে ওই গাছগুলি হবে আসল আশ্রয়। তাছাড়া, গোটা দক্ষিণবঙ্গের জন্য ম্যানগ্রোভের প্রাচীর ভবিষ্যতে হয়ে উঠবে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়গুলির মোকাবিলায় সবচেয়ে বড় ঢাল। সবচেয়ে বড় ভরসা।










