আবাস যোজনা নিয়ে রাজ্যকে চিঠি কেন্দ্রের:
প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা প্রকল্পের অর্থ নিয়ে কেন্দ্র–রাজ্য সংঘাত চরমে উঠেছে। এই আবহে এবার নবান্নে এল ‘পত্রাঘাত’। পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পক্ষ থেকে নবান্নে চিঠি পাঠানো হয়েছে। সেখানে এই প্রকল্পের ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ তলব করা হয়েছে। চলতি বছরে মার্চে আবাস যোজনার দুর্নীতির অভিযোগ খতিয়ে দেখতে রাজ্যে এসেছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল। গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন সেই প্রতিনিধিদলের সদস্যরা। সঙ্গে ছিলেন জেলাশাসক, বিডিও-রা। এরপর যে রিপোর্ট জমা পড়েছিল, সেই রিপোর্টে ভিত্তিতে এ রাজ্যে আবাস যোজনার বরাদ্দ বন্ধ করে দেয় কেন্দ্র। ১০০ দিনের কাজ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার মতো জনকল্যাণে যৌথ প্রকল্পগুলি নিয়ে বাংলাকে আর্থিকভাবে বঞ্চিত করা হচ্ছে। দিল্লিতে পর্যন্ত সেই প্রতিবাদের ঝড় আছড়ে পড়েছিল। তার আগে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক-দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্তরা আলোচনার টেবিলেও বসেন। যতবারই কেন্দ্রীয় সরকারের বঞ্চনা নিয়ে রাজ্য সরকার সরব হয়েছে ততবার কেন্দ্রকে সাফাই দিয়েছে, অর্থ অনুযায়ী কাজের হিসেবে গরমিল আছে। তাই অর্থ দেওয়া হচ্ছে না। কেন্দ্রের এই দাবি মোটেই সত্যি নয় এই কথা জানিয়ে রাজ্যের পক্ষ থেকে পঞ্চায়েত দফতরের মন্ত্রী প্রদীপ মজুমদার সমস্ত রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। তার পরও জোটেনি বকেয়া। উলটে এল পত্রাঘাত। কী ছিল কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদলের রিপোর্টে? কেন বন্ধ করে দেওয়া হল বরাদ্দ? রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অভিযোগ তুলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। ১৫ তারিখ ফের নবান্নে চিঠি পাঠাল গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক। তাতে তিন জেলা – কালিম্পং, নদিয়া ও দক্ষিণ ২৪ পরগনায় আবাস যোজনার কাজে বেশ কিছু অসংগতির কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্যের ‘অ্যাকশন টেকেন রিপোর্ট’ কী, তা জানতে চেয়েছে দিল্লি। কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের সফরের ৮ মাস পর এল এই চিঠি। ৩০ নভেম্বরের মধ্যে রাজ্যের রিপোর্ট পাঠাতে হবে মন্ত্রকে। রাজ্য বিজেপির মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্যের দাবি, ‘শুধু তিনটে জেলার অসঙ্গতি নয়, অসঙ্গতি সর্বত্র আছে। প্রধানমন্ত্রীর যে স্বপ্নের পরিকল্পনা, ভারতবর্ষের মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল, যে প্রত্য়েক মানুষের মাথার উপরে পাকা বাড়ির ছাদ থাকবে। আজকে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়িত করা যাচ্ছে না, তৃণমূল কংগ্রেসের সীমাহীন দুর্নীতি, এবং হিসেব বর্হিভূত খরচ, এই প্রকল্পের টাকা অন্য প্রকল্পের নিয়ে যাওয়া কারণে’। রাজ্যসভার সাংসদ শান্তনু সেন বলেন, ‘এই বাংলা বিদ্বেষী, বাঙালি বিদ্বেষী বিজেপি বাংলাকে বঞ্চনা করার জন্য প্রকল্প বানায় এবং সেটা নিয়ে গর্ববোধ করে। ১১ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের বাড়ির টাকা, সাড়ে ৮ হাজার কোটি টাকা, প্রথম কিস্তি, সেই টাকা আটকে রেখে দিয়েছেন। প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকা, একশোর দিনে টাকা তারা আটকে রেখে দিয়েছেন। যত ২৪-র লোকসভা ভোট এগিয়ে আসছে, তৃণমূলের সঙ্গে রাজনীতি পেরে না ওঠে প্রতিহিংসাপরায়ণতার কারণে বাংলার আর্থিকভাবে বঞ্চনা করার চেষ্টা করছে’। নবান্ন সূত্রে খবর, আগামীকাল মঙ্গলবারই পালটা চিঠি দেবে রাজ্যের পঞ্চায়েত দফতর।