হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেলেন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক:
সোমবার রাতে হাসপাতালে থেকে ছাড়া পেলেন জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। ঘড়িতে তখন ১০ বেজে ১২ মিনিটে। রাতেই তাঁকে সিজিও কমপ্লেক্সে নিয়ে গিয়েছিল ইডি। বাড়ি থেকে জামা ও খাবারও পাঠানো হয়েছিল মন্ত্রীর জন্য। তবে রাতে আর জ্যোতিপ্রিয়কে জেরা করা হয়নি বলে জানা যায়। তবে মঙ্গলে সকাল থেকেই শুরু হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদ পর্ব। ঘুমানোর জন্য মাটিতে পেতে দেওয়া হয়েছিল গদি। যদিও রাতের দিকে বালুর ঘুম আসেনি বলেই খবর। রাতভর ওই ঘরে হাঁটাচলা করেছেন তিনি। ভোরের দিকে ঘুমোন বলে খবর। মঙ্গলবার সকাল সকালই উঠে পড়েন বালু। সকাল ৮টা নাগাদ খালি পেটে তিন ধরনের ওষুধ খান। এরপর চিনি ছাড়া লিকার চা, সঙ্গে সুগার ফ্রি বিস্কুট ও পাউরুটি খান। ১০ দিন তিনি এখানেই থাকবেন। মন্ত্রীর জন্য ইডি দপ্তরে আলাদা সেলের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে সূত্রের খবর। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক পরিস্থিতি নিয়ে চিকিৎসকরা ক্লিনচিট দেওয়ায় মঙ্গলবার সকাল থেকেই তাঁকে জেরা শুরু করেছেন ইডি তদন্তকারীরা। তাঁর আপ্ত সহায়ক ও ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানের সঙ্গে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার সম্ভাবনা প্রবল। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের শারীরিক অবস্থা এখন একেবারেই স্থিতিশীল। গত শুক্রবার আদালতে সংজ্ঞা হারানোর পর বাইপাস সংলগ্ন একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে। তিনদিনে দফায় দফায় এমআরআই ছাড়াও সিটি স্ক্যান, রক্তের নানাবিধ পরীক্ষার পাশাপাশি ইসিজি, ইকো এবং হল্টার মনিটরিং করা হয় জ্যোতিপ্রিয়র। রেশন বণ্টনে অব্যবস্থা নিয়ে মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে খবর। তাঁর দুই আপ্ত সহায়ক অভিজিৎ দাস ও অমিত দে-কে টানা জেরায় যেসব তথ্য পেয়েছেন আধিকারিকরা, তার ভিত্তিতেই জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে জেরা করা হতে পারে। তাঁদের বয়ানের সঙ্গে মন্ত্রীর বয়ান মিলিয়ে দেখা হবে। মূলত তিন জনের সঙ্গে মিলিয়ে দেখা হবে তাঁর বয়ান – দুই আপ্ত সহায়ক ও ইডির হাতে ইতিমধ্যে ধৃত ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমান। নতুন করে আর কোনও পরীক্ষা করার দরকার নেই মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। সেই কারণে রবিবার রাতেই মন্ত্রীকে সিসিইউ থেকে ৩৭৪ নম্বর কেবিনে শিফট করে দেওয়া হয়। আর তারপর থেকেই প্রশ্ন উঠতে থাকে, রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে ধৃত জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের হাসপাতাল থেকে ছুটি হবে কবে? জ্যোতিপ্রিয়র শারীরিক পরিস্থিতি সংক্রান্ত রিপোর্ট এর আগে রবিবারই সন্ধ্যায় এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেটের হাতে তুলে দেয় ওই বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তারপর থেকে সেই গুঞ্জন আরও জোরালো হয়। আর এবার তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হল হাসপাতাল থেকে। রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে বাকিবুর রহমানের গ্রেফতারির পর বার বার উঠে এসেছিল জ্যোতিপ্রিয়র নাম। এদিকে সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা বাকিবুর রহমানের অন্তত ১০০ কোটির সম্পত্তির হদিশ পেয়েছে। নামে – বেনামে, আত্মীয়দের নামে এই বিপুল সম্পত্তি। এগুলি রেশন দুর্নীতির কালো টাকা সাদা করার জন্য করা হয়ে থাকতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। জানা গিয়েছে, অন্তত ৬টি সংস্থায় শেয়ার রয়েছে বাকিবুরের। সেই শেয়ার মিলিয়েই বাকিবুরের সম্পত্তি প্রায় ৫০ কোটি। নিউ টাউন, রাজারহাট, পার্কস্ট্রিটে একাধিক ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বাকিবুরের একাধিক হোটেল, পানশালাও রয়েছে। বিদেশেও তার সম্পত্তি রয়েছে বলে খবর। প্রসঙ্গত, বাকিবুরের ফ্ল্য়াট থেকে সরকারি দফতরের প্রচুর স্ট্য়াম্প পাওয়া গিয়েছিল। সেই স্ট্যাম্প কী জন্য ব্যবহার করা হত তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। এই আবহে বকিবুরের দুর্নীতির সঙ্গে মন্ত্রী যোগের অভিযোগ বারংবার উঠেছে।