৩ কার্তিক ১৪৩২ সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫
৩ কার্তিক ১৪৩২ সোমবার ২০ অক্টোবর ২০২৫

শনিবার কলকাতা ডার্বি, মোহনবাগান না ইস্টবেঙ্গল, এগিয়ে কোন দল?

High News Digital Desk:

নিজস্ব সংবাদদাতা :  শনিবার এই মরসুমের প্রথম ডার্বি। মুখোমুখি মোহনবাগান সুপার জায়ান্ট ও ইস্টবেঙ্গল। মরসুম শুরুর অনেক আগেই নিজেদের দল গুছিয়ে নিয়েছে মোহনবাগান। প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছে তারা। ইস্টবেঙ্গল কিছুটা দেরিতে শুরু করলেও শেষ দিকে দল যতটা সম্ভব গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেছে। ফুটবলে বলা হয়, মাঝমাঠের দখল যার, খেলার দখল তার। সেই কারণে প্রতিটি দলই চায় মাঝমাঠের দখল নিতে। যাতে নিজেদের মধ্যে বল ধরে খেলা যায়।

মরসুমের প্রথম ডার্বির আগে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে মাঝমাঠের নিরিখে কোন দল এগিয়ে তা দেখে নেওয়া যাক।

মোহনবাগান

দলের মাঝমাঠের প্রধান ফুটবলার হুগো বুমোস এই মরসুমেও রয়েছেন। তাঁর দলবদলের জল্পনা শোনা গেলেও শেষ পর্যন্ত সবুজ-মেরুনেই থেকে গিয়েছেন তিনি। এখন ভারতীয় ফুটবলে যত বিদেশি মিডফিল্ডার রয়েছেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম সেরা বুমোস। ভারতীয় ফুটবলে দীর্ঘ দিন ধরে খেলছেন। যেমন ডিফেন্স চেরা পাস বাড়াতে পারেন, তেমনই গোল করতে পারেন। এ বার ডুরান্ডে একটি গোল হয়েও গিয়েছে তাঁর।

এই মরসুমে বুমোস পাশে পাবেন অনিরুদ্ধ থাপাকে। ইগর স্তিমাচের ভারতীয় দলেও মাঝমাঠে খেলেন থাপা। মাঝমাঠকে আরও শক্তিশালী করতেই তাঁকে দলে নিয়েছে বাগান। এই দু’জন ডার্বিতে দলের খেলা পরিচালনা করবেন।

দলের দুই উইঙ্গারের ভূমিকায় দেখা যাবে লিস্টন কোলাসো ও সাহাল আব্দুল সামাদকে। লিস্টন এই মরসুমে ছন্দে রয়েছেন। ডুরান্ডের প্রথম দুই ম্যাচে সেটা দেখা গিয়েছে। বাঁ প্রান্ত ধরে আক্রমণের দায়িত্ব থাকবে তাঁর হাতে। গোলও করতে পারেন। ডান প্রান্তে থাকবেন সাহাল। ভারতীয় দলের আরও এক তরুণ ফুটবলার। তিনিও জাতীয় দলে নিয়মিত।

এ ছাড়া আশিক কুরুনিয়ানও রয়েছেন দলে। লিস্টন এত ভাল খেলছেন যে আশিক সুযোগ পাচ্ছেন না। তবে পরিবর্ত হিসাবে তাঁকে দেখা যেতে পারে। চার মিডফিল্ডারের ঠিক পিছনে ব্লকার হিসাবে খেলানো হতে পারে গ্লেন মার্টিন্সকে।

ইস্টবেঙ্গল

মোহনবাগানের তুলনায় ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠ অনেকটাই অপরীক্ষিত। বেশির ভাগই নতুন ফুটবলার। স্পেনের সাউল ক্রেসপোকে এ বার নেওয়া হয়েছে। একটি ম্যাচেই তিনি খেলেছেন। পেনাল্টি থেকে গোলও করেছেন। কিন্তু ভারতীয় ফুটবলের সঙ্গে এখনও পরিচিত নন তিনি। বাকি ফুটবলারদের সঙ্গে তাঁর কতটা বোঝাপড়া হয়েছে তা ম্যাচের দিন বোঝা যাবে।

গত বার থেকে লাল-হলুদে খেলছেন শৌভিক চক্রবর্তী। কলকাতার পরিচিত মুখ। মোহনবাগানেও দীর্ঘ দিন খেলেছেন। ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিন্তু শৌভিক আর আগের ছন্দে নেই। ফলে তিনি কতটা ওয়ার্কলোড নিতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

বাঁ প্রান্তে দেখা যাবে মহেশ নাওরেম সিংহকে। লাল-হলুদের এই দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার। ভাল গতি রয়েছে। মাপা ক্রস দিতে পারেন। আবার গোল করতেও পারেন। নাওরেম কতটা সাবলীল খেলতে পারেন তার উপরেই ইস্টবেঙ্গলের সাফল্য নির্ভর করছে। বাকিদের থেকে সাহায্য না পেলে কিন্তু নাওরেমের একার পক্ষে সব করা সম্ভব হবে না।

ডান প্রান্তে দেখা যাবে নন্দকুমারকে। তিনিও এ বার নতুন এসেছেন। ভারতীয় ফুটবলের আর এক তরুণ প্রতিভা। তবে তাঁরও ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা নেই। ফলে কতটা চাপ নিতে পারবেন তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।

মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মাঝমাঠের তুলনা করলে দেখা যাবে মোহনবাগান অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে। কারণ, তাদের দলে ডার্বি খেলার অভিজ্ঞতা ও ভারতীয় ফুটলের অভিজ্ঞতা থাকা ফুটবলার বেশি। তা ছাড়া অনেক দিন ধরে একসঙ্গে খেলছেন তাঁরা। সেই তুলনায় ইস্টবেঙ্গলের বেশির ভাগ ফুটবলার নতুন। তাই বাগান ফুটবলারদের টেক্কা দিতে সমস্যায় পড়তে পারে তারা।

মরসুমের প্রথম ডার্বির আগে মোহনবাগান ও ইস্টবেঙ্গলের মধ্যে রক্ষণের নিরিখে কোন দল এগিয়ে তা দেখে নেওয়া যাক।

মোহনবাগান

গত মরসুমের থেকে এ বার দল আরও শক্তিশালী করেছে মোহনবাগান। স্ট্রাইকার, মিডফিল্ডার এবং ডিফেন্ডার— তিনটি বিভাগেই নতুন ফুটবলারদের এনেছে তারা। ফুটবল বিশেষজ্ঞদের মতে, আইএসএল তো এসেছেই। এ বার এএফসি কাপ জিতে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ছাপ ফেলার লক্ষ্যে অপ্রতিরোধ্য দল তৈরি করেছে মোহনবাগান।

এমনিতে কলকাতা লিগে যে দল খেলছে, সেই দলেরই বেশ কিছু ফুটবলারকে ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচে খেলিয়েছিল মোহনবাগান। সেই ম্যাচের কোচ ছিলেন বাস্তব রায়। কিন্তু পঞ্জাব এফসি-র বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ম্যাচ থেকেই মূল কোচের দায়িত্ব নিয়ে নেন জুয়ান ফেরান্দো। এসেই আমূল বদলে ফেলেন দল। গোলে অর্শ আনোয়ার, রবি রানা, অভিষেক সূর্যবংশী এবং সুহেল ভাট ছাড়া বাংলাদেশ আর্মি ম্যাচের কাউকে দলে রাখেননি।

পঞ্জাব ম্যাচে মোহনবাগানের রক্ষণে ছিলেন শুভাশিস বসু, আনোয়ার আলি, ব্রেন্ডন হ্যামিল এবং গ্লেন মার্টিন্স। ইস্টবেঙ্গল ম্যাচে সেই রক্ষণ ভাগ বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা। রক্ষণে বিদেশি বলতে ফেরান্দোর হাতে রয়েছেন ফ্লোরেন্তিন পোগবা। এ ছাড়া স্বদেশিদের মধ্যে আশিস রাই রয়েছেন। আর এক বিদেশি হেক্টর ইয়ুস্তে এখনও দেশে আসেননি। ফলে ডার্বিতে শুভাশিস, আনোয়ার, হ্যামিলের জায়গা কার্যত পাকা। দেখার যে মার্টিন্সকে খেলানো হয়, নাকি আশিসকে নামানো হয়। এমনকি, দল অপরিবর্তিত রাখার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। তবে পঞ্জাবের কাছে গোল না খেলেও মোহনবাগানের রক্ষণ নিয়ে কিছুটা চিন্তা থাকছেই।

ইস্টবেঙ্গল

ইস্টবেঙ্গলের রক্ষণ প্রথম ম্যাচেই প্রবল সমালোচিত হয়েছে। কার্যত রক্ষণের ভুলেই দু’গোলে এগিয়ে থেকেও জিততে পারেনি ইস্টবেঙ্গল। ডার্বির প্রত্যেকের কাছেই অগ্নিপরীক্ষা। প্রথম ম্যাচে গুরসিমরত সিংহ গিল, হরমনজ্যোত খাবরা, মন্দার রাও দেসাই এবং লালচুংনুঙ্গাকে খেলান কুয়াদ্রাত। নিশু হাতে না থাকায় ডান দিকে মহম্মদ রাকিপ, এডউইন সিডনি ভ্যান্সপলকে খেলানো যেতে পারে। আবার মাঝে বিদেশি জর্ডান এলসেকেও খেলাতে পারেন কুয়াদ্রাত। ডুরান্ডের প্রথম ম্যাচের আগের দিন রাত ১০টায় কলকাতায় এসেও পরের দিন ম্যাচে নেমেছিলেন এলসে। অনেকেই তাঁকে দ্বিতীয় গোলের জন্যে দায়ী করেছিলেন। সতীর্থদের সঙ্গে এক দিনও অনুশীলন না করা এলসেকে কেন কুয়াদ্রাত খেলিয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন উঠেছে।

তবে দ্বিতীয় ম্যাচের আগে এলসে অনেকটাই প্রস্তুতির সময় পাবেন। তাঁকে খেলানো হবে কি না, তা নির্ভর করছে কুয়াদ্রাতের উপরে। ডিফেন্সে এলসে ছাড়া খুব বেশি বদল হওয়ার সম্ভাবনা কম। নয়া ডিফেন্ডার জোসে আন্তোনিয়া পারদোকে খেলানোর সম্ভাবনা কার্যত নেই।

রক্ষণে ধারে-ভারে মোহনবাগান স্বাভাবিক ভাবেই এগিয়ে রয়েছে ইস্টবেঙ্গলের থেকে। তারা অনেক আগে অনুশীলনও শুরু করেছে। সেখানে ইস্টবেঙ্গলে এখনও বোঝাপড়া গড়ে উঠতে সময় লাগবে। তবে ডার্বি যে হেতু ৫০-৫০, তাই ম্যাচের দিন কে কেমন খেলছেন তার দিকে নজর থাকবে সকলেরই।

 

Scroll to Top