যূপচ্ছেদনের মধ্যে দিয়ে সূচনা হল কোচবিহারের ঐতিহ্যবাহী বড়দেবীর পুজোর :-
কোচবিহারের বড়দেবীর মূর্তি এবং পুজা পদ্ধতি দুটোই বেশ ব্যতিক্রমী। সেই বড়দেবীর শক্তিদন্ডের জন্য ময়না গাছ এসে পৌঁছালো মদনমোহন বাড়িতে। রাজআমল থেকে এই প্রথা চলে আসছে। কথিত আছে কোচবিহার রাজবংশের প্রথম রাজা বিশ্বসিংহ প্রথম বার এই ময়না গাছের ডালকেই দেবী ভবানী রূপে পুজো করেছিলেন। পরবর্তীতে মূর্তি তৈরী করে পুজো করা শুরু হলে সেখানে বড়দেবীর মূর্তির কাঠামো তৈরীর মূল এই ময়না কাঠ বা যূপকাষ্ঠকেই মানা হয়। দেবীমূর্তি তৈরীর জন্য এই গাছ কেটে আনার প্রথাকে যূপচ্ছেদন বলা হয়ে থাকে।
ময়না গাছের অপ্রতুলতার কারনে এবছর মদনমোহন বাড়ির ভেতরের ময়না গাছের কাঠ দিয়েই যূপকাষ্ঠ বা দেবীর শক্তিদন্ড তৈরী করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পাশাপাশি খোঁজ চলছিল ময়না গাছের। অবশেষে টাকাগাছ রাজারহাট অঞ্চলে গাছটি পাওয়া যাওয়ায় খুশি দেবত্র ট্রাষ্ট বোর্ডের কর্মীরা। সোমবার ময়না গাছ আনার পর সেখানে তা পরিস্কার করে পুজোর উপযোগী করার কাজ চলছে।
কোচবিহারের দেবীবাড়িতে পুজোর সময় বড়দেবীর যে মূর্তি তৈরী করা হয়, তার জন্য সাড়ে সাত হাত ময়না গাছের ডাল লাগে। এই ময়না গাছ আগে এসব অঞ্চলে প্রচুর পাওয়া গেলেও, আজকাল আর তেমন দেখা যায় না। এই গাছের জন্য জলা জায়গার প্রয়োজন। পুজোর আগে প্রতি বছর ময়না গাছ খুঁজতে গিয়ে খুব সমস্যায় পড়তে হয় ট্রাষ্ট বোর্ডের কর্মীদের। এই গাছ পাওয়াও আজকাল খুব দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে। পরবর্তী কালে বড়দেবীর পুজোয় যাতে কোনো রকম ব্যঘাত না ঘটে সেই নিয়ে কিছুদিন যাবৎ চিন্তা ভাবনা করা হচ্ছিল। প্রত্যেক বছর এই খোঁজাখুঁজির হাত থেকে রেহাই পেতে স্থানীয় ডাঙ্গর আই মন্দিরের পুকুরের পূর্ব দিকে ময়না গাছ লাগানোর পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে দেবত্র ট্রাষ্ট বোর্ডের পক্ষ থেকে জানা গিয়েছে।
বুধবার সকালে মদনমোহন বাড়ি থেকে ময়না কাঠ নিয়ে যাওয়া হবে স্থানীয় ডাঙ্গর আই মন্দিরে। পরদিন অর্থাৎ ২৪ তারিখ সকাল নয়টায় এই ময়না কাঠের পুজো হবে সেখানে। একে বলে যূপ পূজা। তারপর বিকেল বেলা আবার মদনমোহন বাড়িতে নিয়ে আসা হবে। সেখানে একমাস এই যূপ পূজা চলবে। রাধা অষ্টমীর ভোরে রাজ প্রতীক হনুমান দন্ড ও বাদ্য সহযোগে শক্তিদন্ড নিয়ে যাওয়া হবে দেবীবাড়ি। সেখানে পুজোর পর শুরু হবে বড়দেবীর মূর্তি তৈরীর কাজ। রাজ পরম্পরা মেনে আজও এই প্রথা চলে আসছে কোচবিহারে।