৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

‘যুক্তিনির্ভর বিরোধিতার ভাষা তৈরি না হলে আবার হারবেন,’ লিখলেন কবীর সুমন

High News Digital Desk:

কলকাতা : আরজি কর কাণ্ডে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বিরোধিতা করতে গিয়ে ‘রাজনীতির লোকেরা’ ‘গালাগাল’ ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ তুললেন বিশিষ্ট সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমন। সামাজিক মাধ্যমে তিনি লিখেছেন, ‘রাগের মাথায় লোকে গালাগাল দিয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু সেটা যদি নিত্যভাষায় সমানে স্থান পেতে থাকে, তাহলে বুঝতে হবে সেই ভাষাভাষীর বিরুদ্ধতার নিচে আসলে রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞান, মেধা ও যুক্তির মাটি নেই। এই সংস্কৃতি আজ আমাদের রাজ্যে কায়েম হয়ে গিয়েছে। রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে নিয়ে কথায় কথায় বিদ্রুপ করা, গাল দেওয়ার সংস্কৃতি। এই অস্ত্র দিয়ে কি বিরোধীরা গত ভোটে কোনও সুবিধে করতে পারলেন? আগেও হেরেছেন, ফের আরও ল্যাজে গোবরে হয়ে হারলেন। এই সংস্কৃতি ত্যাগ করে যুক্তিনির্ভর বিরোধিতার ভাষা যদি তাঁরা তৈরি করে নিতে না পারেন, তাহলে তাঁরা আবার হারবেন এবং শাসকদল আরও জোরালো হয়ে উঠবে – যেটা গণতন্ত্রের জন্য স্বাস্থ্যকর বলে আমি মনে করি না।’

সামাজিক মাধ্যমে কবীর সুমনের লেখায় উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর সমর্থকদের প্রতি বিরোধীদের ‘ভাষা-সন্ত্রাসের’ প্রসঙ্গ। খেদ ও বক্রোক্তি মিশিয়ে সেক্ষেত্রে কবীরের মন্তব্য, “কে না জানে, এই রাজ্যের অনেক বাংলাভাষী স্বঘোষিত প্রগতিশীল মানবনিদর্শন আমাকে ‘চটিচাটা’ নামে ডেকে সুখ পান। অর্থাৎ আমি শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের গোলাম। পঁচাত্তরোর্ধ্ব কবীর সুমন প্রসঙ্গে অষ্টপ্রহর গাল দিয়ে যাঁরা সুখ পান, তাঁরা সুখেই থাকুন না হয়। কিন্তু তাঁরা যদি দাবি করেন তাঁরা রাজনীতির লোক, তাহলে সংগ্রামের স্বার্থেই তাঁদের উচিত হচ্ছে না শ্রীমতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমানে ‘চটিপিসি’ বা ওই ধরনের নামে ডাকা।” উল্লেখ্য, আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-তরুণীর ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদ করতে গিয়ে সম্প্রতি প্রখ্যাত অভিনেত্রী অপর্ণা সেনকেও একই অপমানসূচক বিশেষণ শুনতে হয়েছে।

সামাজিক মাধ্যমে পোস্টের শুরুর দিকে রাজনীতি সচেতন, প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ তথা বিশিষ্ট এই সঙ্গীতশিল্পী এও উল্লেখ করেছেন যে, ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের জন-অনুকূল কার্যক্রম সত্ত্বেও দুর্নীতি নিয়ে অনেকের মনে যে ক্ষোভ বেশ কিছুদিন ধরে জমেছিল, তারও প্রকাশ ঘটেছে মহিলাদের রাত দখল অভিযানে। আমার অনুভব, এই ধাক্কা দরকার ছিল।’ তবে কবীর সুমন ‘শান্তিপূর্ণ বলে দাবি করা মিছিল’ থেকে বিক্ষিপ্ত সহিংস কার্যকলাপের সমালোচনা করতেও ভোলেননি।

আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে মহিলাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি সম্পর্কে বিশিষ্ট ও বিতর্কিত সঙ্গীতশিল্পী কবীর সুমনের তাৎপর্যপূর্ণ প্রত্যাশাটিও এক্ষেত্রে উল্লেখের দাবি রাখে। তিনি লিখেছেন, ‘রাত দখল আন্দোলন যদি কালক্রমে তার নাগরিক কলেজপড়া হিন্দু উচ্চমধ্যবিত্ত পরিসরটি পেরিয়ে সমাজের অন্যান্য স্তরেও ছড়িয়ে পড়ে, ভাল হয়।’

সামাজিক মাধ্যমে যথেষ্ট সক্রিয় কবীর সুমন তাঁর রবিবারের পোস্টের একেবারে শেষে ফেক নিউজের বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। লিখেছেন, ‘গণতান্ত্রিক সরকার বিরোধিতা, রাষ্ট্রবিরোধিতা, বিরুদ্ধ আবেগ বেঁচে থাকুক। শুধু মিথ্যেকে আশ্রয় করে নয়।’

সমাজমাধ্যম ও তার বাইরে কবীর সুমনের পোস্ট ঘিরে যথারীতি চলছে আলোচনা। মিলেছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

Scroll to Top