কলকাতা: আরজি কর হাসপাতাল কাণ্ডে রাজনীতি| কিছুতেই থামছে না রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে তোপ, পাল্টা তোপ| কখনও বিরোধীদের তীব্র আক্রমণ ধেয়ে আসছে শাসক শিবিরের দিকে| কখনও-বা শাসকদল ছড়ে দিচ্ছে প্রবল শ্লেষ| তাতেই নব সংযোজন এক্সে (X) তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পোস্ট| শনিবার বেলা ১১টা ৪৩ মিনিটে সিপিআইএমের প্রতি কুটিল কটাক্ষ হেনে পোস্টটি করেছেন কুণাল| তিনি নিজের এক্স (X) হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (MamataOfficial) চাইছেন ফাঁসি, মৃত্যুদণ্ড| অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (abhishekaitc) চাইছে চরমতম ব্যবস্থা, মৃত্যুদণ্ড| সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেস (AITCofficial) চায় যথাযথ তদন্ত, কঠিনতম শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড|’ এরপরই চরম বিদ্রূপ উঠে এসেছে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পোস্টে| তিনি এরপর লিখেছেন, ‘সিপিএমের দাবি, যত বড় অপরাধ হোক, মৃত্যুদণ্ড চলবে না| ফাঁসি রদ হোক|’
প্রাক্তন তৃণমূল সাংসদ কুণাল ঘোষ তাঁর এই পোস্টের সঙ্গে তুলে ধরেছেন অষ্টাদশ লোকসভা নির্বাচন, ২০২৪ উপলক্ষে প্রকাশিত সিপিআইএমের নির্বাচনী ইশতেহার| সেখানে ‘সংবিধান ও গণতন্ত্র রক্ষা’ শীর্ষক ১৮ তম পৃষ্ঠার ছবি দেখা যাচ্ছে| তাতে ‘সিপিআইএম নিশ্চিত করবে’ বলে উল্লেখিত তালিকায় দেখা যাচ্ছে এক জায়গায় লেখা আছে, ‘মৃত্যুদণ্ডের ধারা রদ করা|’ বোঝানোর সুবিধার্থে কুণালের পোস্টে ওই বাক্যাংশ লাল কালি দিয়ে চিহ্নিত করা হয়েছে| অর্থাৎ, ২০২৪-এ প্রকাশিত সিপিআইএমের ইশতেহারে এটা স্পষ্ট যে, সিপিআইএম দল মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে| ইশতেহারে সিপিআইএম লিখেছে, ‘সংবিধান, গণতন্ত্র ও সাংবিধানিক অধিকার পদদলিত করছে যে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো তা বাতিল করা হবে|’ ইশতেহারেই তাদের দাবি, আরও অনেক কিছুর সঙ্গে ‘এর জন্য প্রয়োজন মৃত্যদণ্ডের ধারা রদ করা|’
এই মুহূর্তে আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-তরুণীর উপর ঘটে যাওয়া নারকীয় হত্যালীলায় উত্তাল রাজ্য তথা গোটা দেশ| বিরোধীদের সমালোচনায় রীতিমতো কোণঠাসা পশ্চিমবঙ্গের শাসকদল তৃণমূল| নারীরা তো বটেই, পুরুষরাও পথে নেমে আন্দোলনে সোচ্চার| আন্দোলনে চিকিৎসক থেকে সব মহলের প্রতিনিধিরা| দাবি একটাই – অপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি| তৃণমূল কংগ্রেসের শীর্ষস্থানীয় নেতানেত্রীও একই দাবিতে পদযাত্রা করেছেন| রাজ্যের অন্যান্য বিরোধী দলের মতো শাসকদল তৃণমূলকে বিঁধছে সিপিআইএমও| আন্দোলনরত নাগরিককে শাসকের বিরুদ্ধে এককাট্টা করতে চাইছে তারা| কিন্তু অধিকাংশ আন্দোলনরত মানুষ যখন সর্বোচ্চ সাজা ফাঁসির দাবিতে সরব, তখন সিপিআইএম কী করবে? তারা কি রাজ্যের শাসনভার থেকে তৃণমূলকে সরাতে চলতি বছরেই প্রকাশিত নিজেদের নির্বাচনী ইশতেহারের বক্তব্য থেকে সরে আসবে? নাকি সংখ্যাগরিষ্ঠ বিক্ষুব্ধ নারী-পুরুষের দাবিকে অস্বীকার করে ‘মৃত্যুদণ্ডের ধারা রদ করা’র লক্ষ্যে অবিচল থাকবে? তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষের পোস্ট থেকে উঠে আসছে এই প্রশ্নগুলি| বলা যায়, শোচনীয়ভাবে জনসমর্থন হারানো সিপিআইএম যাতে তৃণমূল-বিরোধী এযাবৎ এতটা বেনজির আন্দোলনেও দাবি-সূত্রে জনবিচ্ছিন্ন থেকে যায়, সেই উদ্দেশ্যেই কুণাল ঘোষ এক্সে আজ এই কৌশলী পোস্টটি করেছেন|