নিজস্ব সংবাদদাতা : বৃহস্পতিবার বিরোধীদের বাক্যবাণে বিদ্ধ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। শুক্রবার তারই পাল্টা দিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। প্রধানমন্ত্রীর বৃহস্পতিবারের লোকসভার জবাবি ভাষণের প্রত্যুত্তর দিলেন রাহুল। মোদির ‘হাসি আর মশকরা’-র জবাবে শুক্রবার কংগ্রেস সদর দফতরে সাংবাদিক বৈঠকে বললেন, ‘‘উনি সারা ভারতের প্রতিনিধি। আমারও প্রতিনিধি। কিন্তু বলতে বাধ্য হচ্ছি, ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদের গুরুত্ব কী, সেটাই উনি বোঝেন না।’’
লোকসভায় অনাস্থা বিতর্কের শেষে বৃহস্পতিবার মোদির দু’ঘণ্টা ২০ মিনিটের জবাবি ভাষণের বড় অংশ জুড়েই ছিল নিজের সরকারের ‘সাফল্যের’ দাবি এবং জওহরলাল নেহরু থেকে মনমোহন সিং পর্যন্ত কংগ্রেসের প্রধানমন্ত্রীদের জমানার ‘ব্যর্থতার’ প্রসঙ্গ। কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন পূর্বতন সরকারগুলির নানা ‘ভুল’ তুলে ধরে নরেন্দ্র মোদি হেসেছেন, কটাক্ষ করেছেন। আর তাতে ধুয়ো তুলেছেন ট্রেজারি বেঞ্চের সাংসদেরা। সেই প্রসঙ্গের উল্লেখ করে শুক্রবার রাহুল বলেন, ‘‘মণিপুরে মানুষের মৃত্যু হচ্ছে, মহিলারা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন, আর উনি হেসে হেসে কথা বলেছেন, মশকরা করেছেন। আলোচনার বিষয় কিন্তু কংগ্রেস ছিল না। আমি ছিলাম না। আলোচনার বিষয় ছিল মণিপুরের বর্তমান সঙ্কট এবং তার সমাধানের উপায়।’’
রাহুল বুধবার অনাস্থা বিতর্কে বলেছিলেন, ‘‘মণিপুরে ভারতমাতার হত্যা করেছে বিজেপি।’’ যা নিয়ে প্রবল আপত্তি তুলেছে শাসক শিবির। রাহুল তাঁর ওই মন্তব্যের ‘ব্যাখ্যা’ দিয়ে বলেন, ‘‘হ্যাঁ আমি বলেছি। কারণ বিজেপির বিভাজনের রাজনীতির জেরে মণিপুর আর অখণ্ড একটি রাজ্য নেই। দু’টুকরো হয়ে গিয়েছে।’’ রাহুলের দাবি, তাঁর ১৯ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতায় কখনও মণিপুরের মতো ভয়াবহ পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি। এ প্রসঙ্গে তাঁর জুন মাসের মণিপুর সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন রাহুল। তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন মেইতেইদের এলাকায় গিয়েছিলাম, তখন স্পষ্ট ভাষায় জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, আমি স্বাগত, কিন্তু নিরাপত্তারক্ষীদের দলে কোনও কুকি থাকলে তাঁকে গুলি করে খুন করা হবে। ঠিক উল্টো কথা জানানো হয়েছিল, কুকিদের তরফে। যখন তাঁদের এলাকায় গিয়েছিলাম।’’ রাহুল জানান, সেই ‘ফরমান’ মেনে চলতে হয়েছিল তাঁকে। তাঁর কথায়, ‘‘মণিপুর যে আর অখণ্ড নেই, এটাই তার উদাহরণ। ভারতীয়ত্বের ভাবনাকে মণিপুরে খুন করেছে বিজেপি।’’ এর পরেই প্রধানমন্ত্রীকে নিশানা করে প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতির মন্তব্য, ‘‘মণিপুরের এই সঙ্কটের মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রীর উচিত ছিল দেশের আওয়াজ হয়ে ওঠা। কিন্তু সে পথে না হেঁটে তিনি সাধারণ রাজনীতিকদের মতো ক্ষুদ্র রাজনীতি করছেন। নির্লজ্জের মতো অধিবেশনে বসে থেকেছেন, হেসেছেন, টিপ্পনী কেটেছেন। আর তাঁর দলের অন্য সাংসদেরা তাতে ধুয়ো তুলেছেন।’’
আদালতের রায়ে ফের সংসদে ফিরে এবার প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর মন্ত্রিসভার সদস্যদের দিকে তির নিক্ষেপ শুরু করে দিয়েছেন রাহুল গান্ধী। ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচন অবধি কি তাঁর তোলা প্রশ্নের জবাব দিতেই ব্যস্ত থাকতে হবে কেন্দ্রের শাসক শিবিরকে? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।