১৯ কার্তিক ১৪৩২ বুধবার ০৫ নভেম্বর ২০২৫
১৯ কার্তিক ১৪৩২ বুধবার ০৫ নভেম্বর ২০২৫

ভেস্তে গেল ‘সস্তার রাজনীতি’

High News Digital Desk:

 

“সংসদে রাহুল গান্ধি কী বলেছেন, তা জানতে তাঁর ভাষণের পুরোটা আমরা শুনেছি। তিনি তো শুরুতেই স্পষ্ট বলেছেন, হিন্দু ধর্মে হিংসার কোনও স্থান নেই। পরে তিনি তাঁর সামনে থাকা ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের সাংসদদের উদ্দেশে মন্তব্য করেন, ‘আপনারা নিজেরা নিজেদের হিন্দু বলেন, অথচ সারাক্ষণ হিংসা ও ঘৃণা ছড়ান।’ সুতরাং, রাহুল গান্ধির মন্তব্য ছিল রাজনৈতিক দল-বিশেষের বিরুদ্ধে – হিন্দু সমাজের বিরুদ্ধে নয়।”

না। এটা কোনও কংগ্রেস নেতা বা ইনডিয়া জোটের প্রতিনিধির বক্তব্য নয়। এ কথা বলছেন স্বয়ং জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তাশ্বরানন্দ সরস্বতী। ফলত, ১ জুলাই লোকসভায় রাষ্ট্রপতির সূচনা-ভাষণের জবাবি বক্তব্যে রাহুল গান্ধির করা মন্তব্য তাৎপর্যপূর্ণভাবে হিন্দু-বিরোধিতার অভিযোগ থেকে সম্পূর্ণ ছাড় পেয়ে গেল বললে অত্যুক্তি হবে না। উল্টে, লোকসভার বিরোধী দলনেতার উক্তি নিয়ে খোদ প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে অভিযোগ তুলেছিলেন, কার্যত সেসবই নস্যাৎ হয়ে গেল। সামনে চলে এলো হিন্দু ভাবাবেগ নিয়ে বিজেপি সাংসদদের ‘সস্তা’ রাজনীতির স্বরূপ।

১ জুলাই সংসদের উচ্চকক্ষে বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধি বিজেপিকে নিশানা করে তোপ দাগেন, ‘যাঁরা নিজেরা নিজেদের হিন্দু বলেন, তাঁরা ২৪ ঘণ্টাই হিংসা ও ঘৃণা ছড়িয়ে বেড়ান, মিথ্যা রটিয়ে বেড়ান। আপনারা হিন্দুই নন।’

রাহুল গান্ধির এই মন্তব্যের পরই লোকসভায় তুমুল শোরগোল ফেলে দেন বিজেপি সংসদরা। সেই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মন্তব্য করেন, ‘পুরো হিন্দু সমাজকে হিংস্র বলা অত্যন্ত গুরুতর বিষয়।’

আসলে প্রধানমন্ত্রীর ওই মন্তব্যটিই রাহুলের বিরুদ্ধে হিন্দু ভাবাবেগ টেনে বিজেপির অতিপরিচিত হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সূত্র স্থাপন করে দেয়। বিজেপি সাংসদরা তাতেই প্ররোচিত হয়ে লোকসভার বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করতে থাকেন।

এমতাবস্থায় নরেন্দ্র মোদির বয়ানের তীব্র বিরোধিতা করেন রাহুল গান্ধি। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যে আপত্তি জানিয়ে তিনি বলতে থাকেন, ‘নরেন্দ্র মোদি মানে পুরো হিন্দু সমাজ নয়। বিজেপি বলতে পুরো হিন্দু সমাজকে বোঝায় না। আরএসএস মানেই পুরো হিন্দু সমাজ নয়। পুরো হিন্দু সমাজের ঠেকা নেয়নি বিজেপি।’

এখানেই শেষ নয়। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলতে উঠে যুক্তি সাজান, ‘বিরোধী দলনেতা নির্দিষ্ট করে বলেছেন, যাঁরা নিজেরা নিজেদের হিন্দু বলেন, তাঁরাই হিংসার কথা বলেন, হিংসাত্মক কাজকর্ম করেন। এই দেশে কোটি-কোটি লোক গৌরবের সঙ্গে নিজেদের হিন্দু বলেন। ওই সব লোকই কি হিংসার কথা বলেন? হিংসাত্মক কাজকর্ম করেন?’

অর্থাৎ, রাহুল গান্ধি যাঁদের লক্ষ করে যাই বলুন না কেন, বিজেপি তথা প্রধানমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী গোটা হিন্দু সমাজকে টেনে লোকসভার বিরোধী দলনেতাকে প্যাঁচে ফেলবেনই ফেলবেন – এই দাঁড়িয়েছিল পরিস্থিতি। কিন্তু তাঁদের সেই প্রয়াস কার্যত ভেস্তে গেল জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য অভিমুক্তাশ্বরানন্দ সরস্বতীর মতামতে।

শুধু তাই নয়। অভিমুক্তাশ্বরানন্দ সরস্বতী রীতিমতো একহাত নিয়েছেন প্রশ্নকর্তা সাংবাদিককেও। উপস্থিত সাংবাদিক সরাসরি তাঁকে প্রশ্ন করেছিলেন রাহুল গান্ধির মন্তব্য বিকৃত করে। সেই প্রসঙ্গে জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘রাহুল গান্ধি যা বলেননি, তাঁর বক্তব্যকে অংশত উদ্ধৃত করে তা ছড়ানো, আমাদের মতে, অপপ্রচার ও দণ্ডনীয় অপরাধ।’

এটা অনুমান করা কঠিন নয় যে, জ্যোতিষ পীঠের শঙ্করাচার্য, হিন্দু সমাজের অন্যতম মান্য ব্যক্তি, অভিমুক্তাশ্বরানন্দ সরস্বতীর বক্তব্য মোদি-শাহদের যথেষ্ট বেকায়দায় ফেলল। শাসক-অনুকম্পায় পুষ্ট ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের একাংশকেও কম অস্বস্তিতে ফেলল কি?

Scroll to Top