রাজধানীতে তখনও ভোর| ঘড়ির কাঁটা সাড়ে পাঁচটা ছঁই-ছঁই| একটানা প্রাক বর্ষার ভারি বৃষ্টিতে চারদিকে একটা জড়োসড়ো ভাব| তৱু তারই মধ্যে অন্যান্য দিনের মতো স্বাভাবিক ছন্দে ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর| কে জানত, মুহূর্তে ঘটে যাবে ছন্দপতন| হঠাত্ ১ নম্বর টার্মিনালে প্রচণ্ড আওয়াজ! ব্যাপার কী, ৱুঝে ওঠার আগেই যা হওয়ার হয়ে গেল| ছাদের একাংশ ভেঙে চাপা পড়ে গেল টার্মিনালের বেশ কিছটা এলাকা| আতঙ্ক এবং আর্তনাদ ততক্ষণে জানান দিচ্ছে, প্রাণহানিও অসম্ভব নয়| হলও তাই| শেষ পাওয়া খবর, দুর্ঘটনায় মৃত ১, গুরুতর জখম ৫ জন| ৪টি ইঞ্জিনের সাহায্যে ঘটনাস্থলে উদ্ধার প্রয়াস চালায় দমকল| ১ নম্বর টার্মিনালে থাকা বেশ কয়েকটি গাড়ি ব্যাপক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত| টার্মিনালটি আপাতত বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে| ফলে উড়ান ও অবতরণের চাপ গিয়ে পড়েছে ২ ও ৩ নম্বর টার্মিনালের উপর| স্বভাবতই একাধিক উড়ান বাতিল হওয়ার পাশাপাশি, পূর্ব নির্ধারিত সময়সূচি পাল্টে পিছিয়ে দিতে হচ্ছে বহু বিমানযাত্রা| চড়ান্ত হয়রানির শিকার যাত্রীরা| এই নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেছে বিমানবন্দর কর্তপক্ষ|
দুর্ঘটনার পর ঘটনাস্থলে যান অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী রামমোহন নাইড কিঞ্জরাপু| সাংবাদিকদের তিনি জানান, ১ নম্বর টার্মিনাল পুরোপুরি খালি করে দেওয়া হয়েছে| ধ্বংসস্তূপের নীচে আর কেউ আটকে নেই বলে নিশ্চিত করেছেন তিনি|
ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দুর্ঘটনার জেরে নিহতের পরিবারকে ২০ লক্ষ ও আহতদের ২ লক্ষ টাকা করে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে| কেন্দ্রের ঘোষণার কথা জানিয়েছেন রামমোহন নাইড কিঞ্জরাপ|
কী ভাবে দুর্ঘটনা জানতে পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে| যাত্রীদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার দিকটি যথোচিত গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী| শুধু দিল্লি বিমানবন্দর নয়, সারা দেশে অন্যান্য বিমানবন্দরের পরিস্থিতিও খতিয়ে দেখা হবে বলে প্রতিশ্রুতি তাঁর|
ইন্দিরা গান্ধি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালের ছাদ নড়বড়ে হয়ে গিয়েছিল| জং ধরেছিল ছাদের ভিতরে থাকা লোহার খাঁচায়| এই নিয়ে বিরোধীদের অভিযোগ, নরেন্দ্র মোদি যাতে উদ্বোধন করতে পারেন, তাই তড়িঘড়ি নির্মাণের জেরেই এত বড় অঘটন| যদিও এমন দোষারোপ নস্যাত্ করেছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী| তাঁর দাবি, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ১ নম্বর টার্মিনাল ২০০৯ সালে নির্মিত| পাশের ভবনটি উদ্বোধন করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী|
অর্থাত্, ট্র্যাডিশন বজায় রেখে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনৈতিক তরজা| দেখার এই যে, বিভীষিকা সরিয়ে কবে স্বাভাবিক ছন্দে ফেরে দিল্লি বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনাল| দেখার এই যে, দুর্ঘটনার তদন্ত পারস্পরিক দোষারোপের বাইরে যথাযথ দিশা দেখাতে পারে কিনা| আরও দেখার, দেশের বিমানবন্দরগুলির দশা অদূর ভবিষ্যতে আদৌ বদলায় কিনা|
