৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

বাড়তি ওজনের বিড়ম্বনা, কমানোর উপায়

High News Digital Desk:

‘দুরন্ত আশা’য় কবিগুরু ‘অন্নপায়ী বঙ্গবাসী’র শারীরিক গঠন নিয়ে সরস ব্যঙ্গে লিখেছিলেন, ‘বোতাম আঁটা জামার নীচে শান্তিতে শয়ান।’ ‘অলস দেহ’ আর- ‘বহরে বড়’ হওয়ার সমস্যা এখন শুধু বাঙালির সমস্যা নয়, এ এখন সারা বিশ্বের সমস্যা। অধুনিক জীবনযাত্রায় শরীরে মেদ বৃদ্ধি এক ধরনের রোগ । অর্থাৎ ভারি হওয়া ভারি বিপজ্জনক।

প্রাচীন আয়ুর্বেদ মতে মানব দেহ সপ্তধাতু দিয়ে গড়া। সপ্তধাতুগুলি হল রস, রক্ত, মাংস, মেদ, অস্থি, মজ্জা ও শুক্র। মেদ হল মৃদু ও স্নিগ্ধ ধাতু। এর কাজ হল শরীরের নমনীয় অস্থিকে পুষ্ট করা। মেদ থাকে ত্বকের নীচে। নিতম্ব, উদর আর গলদেশই হল মেদের আশ্রয়স্থল।

মেদবৃদ্ধির প্রধান কারণগুলি হল–
১) আহার জনিত: ঘি, মাখন, পাঁঠার মাংস, শর্করা জাতীয়, তৈলাক্ত ও ময়দা যুক্ত খাদ্য গ্রহণ; মধ্যরাতে খাওয়া (সঠিক সময়ে না খাওয়া ), নিয়মিত বাইরের খাবার খাওয়া, প্যাকেটবন্দি খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মদ্যপান।
২) জীবনযাত্রা: দিবানিদ্রা, কায়িক শ্রম না করা, শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে দীর্ঘসময় থাকা।
৩) বংশগতি: জিন বাহিত বংশগত বৈশিষ্ট্য, থাইরয়েড হরমোনের অস্বাভাবিকতা।

মেদবৃদ্ধি হলে উদর, নিতম্ব ও শরীরের পার্শ্বদেশে বিশেষ প্রভাব লক্ষ করা যায়। চলাফেরার সময় এই অঙ্গগুলি বেশি আন্দোলিত হয়। অতিরিক্ত মোটা ব্যক্তিদের ঘাম, ঘুম, পিপাসা ও ক্ষুধা বেশি হয়। এরা অল্প পরিশ্রমেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।

মেদ থেকে মানবদেহে বাসা বাঁধে ডায়াবিটিস, উচ্চরক্তচাপ, হৃদরোগ, অস্টিওআর্থারাইটিস, মহিলাদের নানান রোগ, সন্তান ধারণের সমস্যা, ওভারিয়ান সিস্ট, মানসিক রোগ ইত্যাদি। চলতি কথায় ‘বাড়ছে কোমর, কমছে উমর(বয়স)।’

এখন প্রশ্ন হল, আমরা এর প্রতিরোধ আর প্রতিকার করব কী ভাবে? প্রথমত, ছোটবেলা থেকেই সতর্ক থাকতে হবে। অতিরিক্ত মিষ্টি, তৈলাক্ত, লবণাক্ত খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে। নারিকেল, খেজুর , ঘি খাওয়ার পরিমাণ কমিয়ে ফেলতে হবে। সারাদিনে আট থেকে দশ গ্লাস জল খেতে হবে। দশদিন অন্তর উপবাস করতে হবে, মানে, শুধুই জল খেয়ে কাটাতে হবে। তবে এসবই ডাক্তারবাবু কিম্বা বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুসারে করবেন। নইলে হিতে বিপরীত হতে পারে।

মেদ ঝরাতে ঘরোয়া টোটকা:
ক) সকালে ৪-৫ টি গোলমরিচ চিবিয়ে খেয়ে জল খান।
খ) ৫ গ্রাম মেথিগুঁড়ো দুপুরে ও রাতে খাওয়ার আগে খান।
গ) খাওয়ার আধঘণ্টা আগে একগ্লাস জল পান করুন।
ঘ) ১০ গ্রাম ত্রিফলা (সমপরিমাণ আমলকি-হরিতকি-বহেড়া) ২০০ মিলি লিটার জলে আগের দিন রাতে ভিজিয়ে রাখুন। পরের দিন ফুটিয়ে অর্ধেক জল (১০০মিলি) হলে, ছেঁকে নিন । ঠান্ডা হলে, ২ চামচ মধু মিশিয়ে পান করুন।
ঙ) পুরোনো চালের ভাত, গম ও যব মেশানো রুটি, সবুজ সবজি, বেলপাতা, আদা, আমলকি, জাম, ঘোল, পুরাতন মধু, ছোট রুইমাছ খান। উপকার পাবেন।
চ) শারীরিক শ্রম, যোগাসন, প্রাণায়ম, ব্যায়াম করুন।
ছ) ময়দা, বেসন, আলু, ঠান্ডা পানীয়, কৃত্রিম পানীয়, মিষ্টি ফল, মিষ্টি বর্জন করুন।
জ) সময়ে খান। অল্প পরিমাণ খাদ্য গ্রহণ করুন।
ঝ) রসালো ফল খান। যেমন– তরমুজ, আপেল, শসা, পেয়ারা, বেদানা, নাসপাতি। সঙ্গে খান ডাবের জল।

মনে রাখবেন, মেদ ধীরে ধীরে ঝরাতে হয়। নইলে ঘটে হিতে বিপরীত। মোটা ব্যক্তির আয়ু হ্রাস হয় তাড়াতাড়ি। মেদহীন স্বাস্থ্যই দীর্ঘ জীবনের চাবিকাঠি।

[প্রতিবেদনটির উদ্দেশ্য সচেতনতা। কোনও সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। প্রশিক্ষকের পরামর্শ মেনে শরীরচর্চা করুন।]

Scroll to Top