কলকাতা : বাতিল হয়ে গিয়েছে বাঙালির সব থেকে হাই ভোল্টেজ ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচ। পুলিশি অপ্রতুলতার কারণে এই ম্যাচ করতে চাননি আয়োজকরা। ম্যাচের আগের দিন শনিবার বৈঠকে বাতিল করে দেওয়া হয় এই ডার্বি। প্রতিবাদে সরব হন বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী-সমর্থক থেকে শুরু করে আপামর ফুটবলপ্রেমী মানুষ। ম্যাচের দিন বিকেল ৫টা থেকে যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনের সামনে বিক্ষোভের ডাক দেন তাঁরা।
রবিবার বিকেলে বৃষ্টির মধ্যেই জড়ো হন প্রচুর মানুষ। ৫টা থেকে ডাক দেওয়া হয়েছিল বিক্ষোভের। দাবি ছিল, ‘জাস্টিস ফর আরজি কর’। পরিকল্পনা ছিল ম্যাচের দিন বিভিন্ন গেটের সামনে শোক পালন হবে নির্যাতিতা তরুণী চিকিৎসকের নারকীয় হত্যার ঘটনায়। ঠিক ছিল, বিক্ষোভকারীরা মাঠের ভিতরেও যাবেন কালো গেঞ্জি পরে, হাতে থাকবে নির্যাতিতার স্মরণে টিফো-ব্যানার-পোস্টার।
নির্ধারিত সময়ের আগেই বিকেল ৪টে থেকে প্রতিবাদীরা জড়ো হতে থাকেন যুবভারতীর ভিআইপি গেটের সামনে। ৫টার আগেই প্রচুর মানুষ ভিড় করেন সেখানে। পুরুষ-মহিলা নির্বিশেষে মানুষ আসতে থাকেন সেখানে। বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট ও কলকাতা পুলিশের বিশাল বাহিনী উপস্থিত ছিল আগে থেকেই। বিক্ষোভের আগেই সেখান থেকে প্রতিবাদীদের সরিয়ে দেয় পুলিশ। কিছুটা দূরে গিয়েও বিক্ষোভ শুরু করেন জড়ো হওয়া নারী-পুরুষ। এরপর পুলিশের লাঠিচার্জ। গ্রেফতার করা হয় কয়েকজনকে। প্রতিবাদে গর্জে ওঠেন ফুটবলপ্রেমী জনতা।
নজিরবিহীন ঐক্যের ছবি এদিন দেখল কলকাতা ময়দান। ইস্টবেঙ্গল, মোহনবাগান, মহামেডান স্পোর্টিংয়ের সমর্থকরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ন্যায় বিচার চাইলেন আরজি করের নির্যাতিতা ডাক্তারের জন্য। দলমত নির্বিশেষে মানুষ এসেছিলেন বিবেকানন্দ যুবভারতী স্টেডিয়ামের বাইরে। একসময় ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাসের দখল নেয় ফুটবলপ্রেমী জনতা। ম্যাচ বাতিল হওয়ার জন্য প্রশাসনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেন তাঁরা। পরবর্তী সময়ে বিক্ষোভে যোগ দেন মোহনবাগান ক্লাবের অধিনায়ক শুভাশিস বসু।সঙ্গে ছিলেন তাঁর স্ত্রী। আসেন অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি কল্যাণ চৌবে। ঘটনাস্থল থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে লালবাজারে নিয়ে যায় কলকাতা পুলিশ। পরে সেখান থেকে তাঁদের ছাড়িয়ে আনেন কল্যাণ চৌবে।
বহু ম্যাচ দেখেছে কলকাতা। বহু ডার্বির সাক্ষী তিলোত্তমা। সেই নিয়ে বহু ঘটনাও ঘটেছে ময়দানে। কিন্তু এ এক ঐক্যের ডার্বি। ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা রাস্তা থেকে তুল নিচ্ছেন মোহনবাগানের পতাকা। সেই পতাকা হাতেই স্লোগান দিচ্ছেন ন্যায়বিচার চেয়ে। আবার পুলিশের হাত থেকে লাল-হলুদের বয়স্ক সমর্থককে বাঁচিয়ে আড়ালে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন সবুজ-মেরুন শিবিরের লোকজন। ক্লাবের পতাকা, জাতীয় পতাকা – সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেল রবিবার সন্ধ্যায় যুবভারতীর সামনে।







