নিজস্ব সংবাদদাতা : বঙ্গে প্রবেশ করেছে বর্ষা| বর্ষার মুখে বিপদ বাড়াচ্ছে বাতিস্তম্ভের খোলা তার| প্রতিবছরই এর কারণে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েই চলে, মৃত্যুও হুঁশ নেই প্রশাসনের| বর্ষা এলেই বিদু্যত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে শহরে| মৃত্যুর কারণ জানা যায়, কিন্তু কার গাফিলতিতে সেই মৃত্যু হল, তা কখনওই সামনে আসে না বলে অভিযোগ| কড়া শাস্তি দেওয়ার নিদর্শন তো নেই-ই, কিছুদিন দায় ঠেলাঠেলি চলে প্রশাসনিক স্তর থেকে রাজনৈতিক মহলে| পাশাপাশি মৃতের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়ে সান্তনা দেন রাজনৈতিক দলের নেতারা| তারপর আবার যে কে সে-ই! কলকাতা পৌরনিগমের হিসাব অনুযায়ী, গত ৫ বছরে বৃষ্টির মধ্যে রাস্তায় বিদ্যুৎপৃষ্ট হয়ে অন্তত ২৩ জনের মৃতু্য হয়েছে| যার মধ্যে সবচেয়ে বেশি শোরগোল পড়েছিল গতবছর হরিদেবপুরে একটি শিশুমৃতু্যর ঘটনায়| যদি আরেকটু অতীতের দিকে তাকাই, রাজভবনের কাছে বাতিস্তম্ভের খোলা তারে বিদু্যত্স্পৃষ্ট হয়েও একজনের মৃত্যু ঘটে| কিন্তু তাতেও কি পরিস্থিতি বদলেছে? নাগরিকদের অভিজ্ঞতা, চলতি বছরেও বর্ষার মুখে শহরের বিপদ বাতিস্তম্ভের সেই খোলা তারই!
ঘটনার সূত্রপাত কলকাতা কর্পোরেশনের ৭ নং বোরোর ৬৪ নং ওয়ার্ড এলাকায়| এই ওয়ার্ডের তৃণমূল কংগ্রেসের পৌরমাতা সিম্মি জাহান| স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ভোটে জেতার পর থেকে কোনদিনই কাউন্সিলরকে এলাকায় দেখতে পাওয়া যায় না| তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন তোলেন না| উল্টে একজন পিএ-কে দিয়ে ফোন তুলিয়ে বলা হয় তিনি বর্তমানে ব্যস্ত রয়েছেন| এলাকাবাসীদের অভিযোগ, বেনিয়াপুকুর থানা সংলগ্ন রাস্তার পাশাপাশি উত্তর কলকাতার বিভিন্ন অলিতে-গলিতে বাতিস্তম্ভের তার খোলা অবস্থায় পড়ে রয়েছে| সবচেয়ে বেশি বিপজ্জনক বাতিস্তম্ভ চোখে পড়ছে শহরের বস্তি এলাকাগুলিতে| বর্ষার মরসুমে কলকাতা কর্পোরেশনের মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে বাড়ি-বাড়ি গিয়ে পৌরসভাগুলিতে ডেঙ্গুর সচেতনতাবার্তা দিতে দেখা গিয়েছে| বাড়ির পচনশীল ও অপচনশীল আবর্জনা ফেলার জন্য পৃথক ডাস্টবিন বালতি প্রদান করার পাশাপাশি বিভিন্ন সচেতনতামূলক প্রচার করছেন কলকাতা কর্পোরেশনের বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলররা| কিন্তু কলকাতা কর্পোরেশনের ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডের পৌরমাতা সিম্মি জাহান ভোটে জেতার পর থেকেই বাড়িতে বসে ঠুঁটো জগন্নাথ এর ভূমিকা পালন করছেন বলে অভিযোগ এলাকাবাসীর| শুধু তাই নয়, ৬৪ নম্বর ওয়ার্ডে নেই কোনও ডাস্টবিনের ড্রাম, যত্রতত্র রাস্তার ওপরেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে থাকে আবর্জনা| দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগ করার পরও ঘুম ভাঙছে না তৃণমূল কংগ্রেসের এই কাউন্সিলরের|
এখন প্রশ্ন হল, এই অব্যবস্থার জেরে কোনও বিপদ ঘটলে তার দায় কে নেবে? এই প্রসঙ্গে কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (বস্তি উন্নয়ন) স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, শহরে নথিভুক্ত, অনথিভুক্ত মিলিয়ে প্রায় ৩,৩৩৪টি বস্তি রয়েছে| গত বছরই পুরসভার বস্তি উন্নয়ন বিভাগের তরফে প্রতিটি বস্তির জন্য ১ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হয়েছে| বাতিস্তম্ভে নজরদারি করার পাশাপাশি ফাইবার দিয়ে মুড়ে ফেলতেও বলা হয়েছে| তারপরেও কোনও গাফিলতি হলে পুরসভার আলো বিভাগ বলতে পারবে|
গত বছরই হরিদেবপুরে খেলতে খেলতে জমা জলে বিদ্যুৎ-এর সংস্পর্শে এসে নিশীথ যাদব নামে এক কিশোরের মৃত্যুর ঘটনায় এরকমই দায় ঠেলাঠেলি সামনে এসেছিল| জানা যায়, ওই কিশোর যেখানে পড়ে গিয়েছিল, তার পাশেই ছিল বিএসএনএলের একটি টেলিফোনের স্তম্ভ| তাতে আলো ঝুলিয়েছিল পুরসভা| বিএসএনএল কর্তৃপক্ষ সাফাই দিয়ে জানায়, টেলিফোনের স্তম্ভ ছুঁলে মৃতু্য হওয়ার কথা নয়| তবে, ওই খুঁটিতে তাঁদের অনুমতি না নিয়েই বিদু্যতের সংযোগ টানা হয়েছিল| ১১৫ নং ওয়ার্ডের পৌরপ্রতিনিধি দাবি করেন, জায়গাটি অন্ধকার ছিল বলে টেলিফোনের ওই স্তম্ভে পুরসভা অস্থায়ীভাবে আলো লাগিয়েছিল| মেয়র পারিষদ (নিকাশি) তারক সিংহ অবশ্য সেইসময় সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়ে দেন, পুরসভা নয়, ব্যক্তিগত স্বার্থেই ওই স্তম্ভে আলো লাগানো হয়েছিল| কিন্তু বছর ঘুরলেও কার গাফিলতিতে সেই ঘটনা ঘটে, তা এখনও জানা যায়নি| একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে রাজভবনের সামনে জমা জলে ঋষভ মণ্ডল নামে এক যুবকের বিদু্যত্স্পৃষ্ট হয়ে মৃতু্যর ঘটনায়| সেখানে পুরসভার একটি খুঁটি থেকে বিদু্যত্ সংযোগ টানা হয়েছিল| পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করে পুরসভা ও সিইএসসি-র কাছে জবাব তলব করে| কিন্তু ২ বছর কেটে গেলেও রহস্য কাটেনি|
