‘ছাত্র হিসেবে ও ছিল যথেষ্ট মেধাবী। ওকে দেখেছি চুপচাপ থাকতে। শান্ত, বিনয়ী, মুখচোরা, নিরীহ, আত্মমগ্ন প্রকৃতির ছেলে। পড়াশোনার বাইরে কম্পিউটারে বুঁদ হয়ে থাকত।’ প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের (Donald Trump) উপর হামলা চালানো থমাস ম্যাথিউ ক্রুক্স (Thomas Matthew Crooks) সম্পর্কে এমনই বর্ণনা পাওয়া যাচ্ছে তার সহপাঠীদের থেকে। আরেক সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, ‘ছাত্রাবস্থায় রাইফেল প্রশিক্ষণে ভর্তি হয়েও অদক্ষতার কারণে বাদ পড়ে ক্রুক্স।’ রয়টার্সের (Reuters) খবর, ২ বছর আগে বেথেল পার্ক হাইস্কুল (Bethel Park High School) থেকে সসম্মানে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করে সে।
সতীর্থরা কেউই ছাত্রাবস্থায় থমাস ম্যাথিউ ক্রুক্সের কোনও প্রকার রাজনৈতিক যোগের কথা মনে করতে পারছেন না। এটা জানা যাচ্ছে যে, পেনসিলভেনিয়ার (Pennsylvania) বেথেল পার্কের (Bethel Park) বাসিন্দা বছর ২০-র থমাস ম্যাথিউ ক্রুক্স বেশ কিছুকাল ধরে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে রোগীদের খাদ্য সরবরাহের জীবিকায় নিযুক্ত ছিল। আশ্চর্যের বিষয় হল, সম্প্রতি ট্রাম্পের দল রিপাবলিকান পার্টিরই (Republican Party) সদস্যপদ নিয়েছিল সে। এ’বছর নভেম্বরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রথমবার ভোটাধিকার প্রয়োগ করার কথা ছিল তার। সাংবাদিকরা তথ্য ঘেঁটে জানতে পারছেন, ক্রুক্সের বাড়িতে কট্টর রাজনৈতিক আবহাওয়া ছিল না একেবারেই। তার বাবা রিপাবলিকান (Republican Party) সমর্থক। অন্যদিকে, মা নির্ভেজাল ডেমোক্র্যাট (Democrat)।
তদন্তকারীরা সামাজিক মাধ্যমে থমাস ম্যাথিউ ক্রুক্সের অ্যাকাউন্ট ঘেঁটেও আপত্তিকর কিছু খুঁজে পাননি— না কোনও হিংসাত্মক রাজনৈতিক পোস্ট, না কোনও অশালীন বক্তব্য। সামাজিক মাধ্যম বা তার বাইরে মানসিক ভারসাম্যহীনতার কোনও আভাসও মেলেনি। এখন প্রশ্ন হল, এমন নির্বিবাদী একটি চরিত্রের দ্বারা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের উপর হামলার মতো দুঃসাহসিক ঘটনা ঘটলো কী করে?
যুক্তরাষ্ট্রে আসন্ন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন উপলক্ষে গত শনিবার পেনসিলভেনিয়ায় একটি রাজনৈতিক কর্মসূচি চলাকালীন রিপাবলিকান পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের উপর হামলা হয়। দেড়শো মিটারেরও কম দূরত্বে থাকা একটি আবাসনের ছাদ থেকে ট্রাম্পকে লক্ষ করে গুলি চালাতে থাকে আততায়ী। অল্পের জন্য প্রাণে বাঁচেন ট্রাম্প। তাঁর একদিকের কানে গুলি লাগে। রক্তাক্ত প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্টের আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১ জন নিহত ও ২ জন গুরুতর আহত হন। ট্রাম্পের বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা পুলিশের গুলিতে শেষপর্যন্ত প্রাণ হারায় আততায়ী। বাজেয়াপ্ত হয় তার ব্যবহৃত আগ্নেয়াস্ত্র। সেটি আততায়ীর বাবা বৈধ ভাবে কিনেছিলেন বলে জানাচ্ছেন তদন্তকারীরা। এরপর পুলিশ আততায়ীর পরিচয় প্রকাশ্যে আনে। জানা যায়, প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে পুলিশের গুলিতে নিহত আততায়ী যুবক পেনসিলভেনিয়ারই বাসিন্দা। নাম– থমাস ম্যাথিউ ক্রুক্স!
হামলার ঘটনায় বিশেষ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিক্রেট সার্ভিসের দুর্বলতা তথা গাফিলতি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মার্কিন মুলুকে। ঘটনা ঘিরে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতিও। ‘খুব অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছি,’ প্রতিক্রিয়া ডোনাল্ড ট্রাম্পের। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে ক্ষমতাসীন জো বাইডেনের (Joe Biden) দল ডেমোক্রেটিক পার্টির (Democratic Party) বিরুদ্ধে এই হামলা কি রিপাবলিকানদের বড় হাতিয়ার হয়ে উঠতে চলেছে? উঠছে প্রশ্ন।