৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫
৩ আশ্বিন ১৪৩২ রবিবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫

নয়া ডিপিআইয়ে বিকাশ ভবনে ‘নারীর ক্ষমতায়ণ’, তবু প্রশ্ন

High News Digital Desk:

রাজ্যে পরবর্তী ডি পি আই (ডাইরেক্টোরেট অফ পাবলিক ইন্সট্রাকশন) নিযুক্ত হলেন ডঃ মধুমিতা মান্না। এটি নারীর ক্ষমতায়নের একটি নজির বলে মনে করছেন শিক্ষাবিদদের একাংশ। ১৭০ বছরের ঐতিহ্যের শিক্ষা অধিকর্তার এই দায়িত্বে এসেছেন ৩৩ জন। এর আগে মহিলা হিসাবে পেয়েছেন মাত্র দু’জন।

যদিও অভিযোগ তুলেছেন কেউ কেউ। অভিযোগ, “১ এপ্রিল এই পদে আসতে চলেছেন এমন ব্যক্তি যিনি প্রফেসর মর্যাদার নন। প্রথা ভেঙে তুলনামূলক জুনিয়র শিক্ষককে এই দায়িত্ব’ দেওয়া হচ্ছে।” এ নিয়ে অধ্যাপকদের একাংশে শুরু হয়েছে কানাঘুষো।

বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসাবে পছন্দের অধ্যাপককে বসানো নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই প্রকাশ্য কাজিয়া চলছে আচার্য তথা রাজ্যপালের সঙ্গে রাজ্যের। কয়েক বছর ধরে বিষয়টি হাইকোর্টে, বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের এক্তিয়ারে রয়েছে। ডি পি আই নিয়ে সেই বিরোধের ব্যাপার নেই। কারণ কে ওই দায়িত্বে যাবেন, তা ঠিক করার এক্তিয়ার রাজ্যের। তাই ‘সিনিয়র’ প্রার্থীর বদলে তথাকথিত ‘জুনিয়র’কে নিয়োগ করলে সবাইকে তা মেনে নিতে হয়।

ডিপিআই হলেন সরকারী এবং সরকারী সাহায্য প্রাপ্ত কলেজ গুলির নিয়ন্ত্রক অফিসার। ১৮৫৪ সাল থেকে প্রথম শিক্ষা অধিকর্তার (ডি পি আই) নিয়োগ হয় পশ্চিম বঙ্গের শিক্ষা দফতরে। তখন থেকে আজ পর্যন্ত কেবলমাত্র বিশেষ কৃতিত্বের প্রফেসর পদের ব্যক্তিই উক্ত পদে বহাল হওয়ার যোগ্য ছিলেন। একাংশের দাবি, এদিক থেকে ঘাটতি রয়েছে মধুমিতা মান্নার।

ভাবী ডিপিআই ছিলেন এডিপিআই পদে। সোমবার তিনি এই প্রতিবেদককে বলেন, “এটা ঠিক, শিক্ষা অধিকর্তার পদে অনেক নামী শিক্ষাবিদ দাবিদার থাকেন। কিন্তু কারও আসীন হওয়ার ক্ষেত্রে মুখ্য আবশ্যিক, তাঁকে ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল সিনিয়র এডুকেশন সার্ভিস’ উত্তীর্ণ হতে হবে। ২০১৭ সালে ওই যোগ্যতামান অর্জন করে আমি বিধাননগর কলেজের অধ্যক্ষ হই। তার পর চার বছর এডিপিআই ছিলাম।”

বাম আমলের শেষদিকে এ রাজ্যে মোট সরকারি কলেজের সংখ্যা ছিল ১৭। এখন হয়েছে ৪৯। সহায়তাপ্রাপ্ত কলেজ মিলিয়ে এখন মোট কলেজের সংখ্যা ৫১৮। কাজের চাপ এবং বিভাগের কলেবর অনেক বেড়েছে। সরকারের উচ্চ শিক্ষা দফতরের সঙ্গে কলেজগুলোর সমন্বয় রাখার মূল দায়িত্ব ডিপিআই-এর। যদিও প্রকাশ্য আলোচনায় এই পদের কথা সেভাবে আসে কম।

সোমবার পর্যন্ত ডিপিআই থাকা প্রাক্তন উপাচার্য নিমাই চাঁদ সাহা। শিক্ষামহল সূত্রে পাওয়া ‘প্রথা ভাঙার’ অভিযোগ নিয়ে প্রশ্ন করলে নিমাইবাবু বলেন, “এ ব্যাপারে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। সাধারনত যথেষ্ঠ সিনিয়র কাউকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়। তবে যাঁকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তাঁকে সরকার নিশ্চয়ই যোগ্য মনে করেছেন, তাই এই নিয়োগ হচ্ছে।”

প্রসঙ্গত, নিমাইবাবু ২০১৫-‘১৬ সালেও ডিপিআইয়ের দায়িত্ব সামলেছেন। এর পর তাঁকে বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য করা হয়। ফের গত বছর ১ জুলাই তিনি ডিপিআইয়ের দায়িত্ব পান। ৬৫ বছর হয়ে যাওয়ায় তাঁর মেয়াদ শেষ হচ্ছে ৩১ মার্চ ২০২৫, অর্থাৎ সোমবার। তবে রাজ্যের ১৬টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনও স্থায়ী উপাচার্য পদে কেউ নেই। সুপ্রিম কোর্টের বিধান মেনে সেগুলোর সাক্ষাৎপর্ব হয়ে গিয়েছে কয়েক মাস আগেই। কিন্তু নবান্ন থেকে পাঠানো সুপারিশের তালিকা পছন্দ না হওয়ায় আচার্য নাম ঘোষণা করছেন না। ফের উপাচার্য হওয়ার আশা রয়েছে নিমাইবাবুর।

যোগ্যতামানের অভিযোগ প্রসঙ্গে মধুমিতা বলেন, “আমি হুগলির গ্রামের স্কুলের মেয়ে। মাধ্যমিক থেকে প্রতিটি পরীক্ষায় বরাবর অত্যন্ত ভালো ফল করেছি।” সেগুলোর উদাহরণ এবং এপিআই-তে (অ্যাকাডেমিক পারফর্মেন্স ইন্ডিকেটর) তাঁর অসাধারণ মূল্যায়ণের তথ্য দেন। বলেন, ”ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে অন্তত দু’জন ডিপিআই ছিলেন যাঁরা ডক্টরেট নন। আর আমি পিএইচডি করেছি ‘ইন্ডিয়ান ইন্সটিট্যুট অফ কেমিক্যাল বায়োলজি’-র মত প্রতিষ্ঠান থেকে। পরবর্তীকালে আমার অধীনে অন্তত ছ’জন ডক্টরেট করেছেন। বিদেশ থেকে সম্মানজনক ডাক পেয়েছিলাম। ইউজিসি-সহ দেশ-বিদেশের এমন নানা প্রকল্পে কাজ করেছি, বা উন্নত নানা দেশের গবেষণাপত্রে এমন সব বিষয় নিয়ে লিখেছি, যা রীতিমত গর্বের। বাবা-মা শিক্ষাক্ষেত্রে ছিলেন। রাজনীতির সঙ্গে আমার বিন্দুমাত্র সম্পর্ক নেই। এর পরে কি যোগ্যতা প্রমাণে আমাকে অগ্নিপরীক্ষা দিতে হবে?”

Scroll to Top