নিজস্ব প্রতিবেদন : বেশি হাঁটাহাঁটি হলেই পায়ের আঙুলে ব্যথা, গোড়ালিতে ব্যথা কিংবা গাঁট ফুলে গিয়ে অসহ্য যন্ত্রণা- এমন উপসর্গ মাঝেমধ্যেই সমস্যায় ফেলে অনেককে| কর্মব্যস্ত জীবন, খাওয়াদাওয়ার অনিয়ম যে সব অসুখকে আরও বেশি করে আমাদের জীবনে ডেকে আনছে তার মধ্যে অন্যতম রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া| এই রোগের কারণে যে কেবল গাঁটে গাঁটে যন্ত্রণা বাড়ে তা নয়, কিডনির সমস্যা ও ওবিসিটির মতো সমস্যাও শরীরে বাসা বাঁধে ইউরিক অ্যাসিডের হাত ধরে|
শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে মূলত হাড় ও কিডনির উপরেই বেশি প্রভাব পড়ে| খাওয়াদাওয়ায় একটু রাশ টানলেই এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব| তবে ইউরিক অ্যাসিডের উপসর্গ সম্পর্কে অনেকেরই তেমন কোনও ধারণা নেই| কোন উপসর্গগুলি দেখা দিলে আগেভাগে সতর্ক হবেন? জেনে নিন –
ঘন ঘন প্রস্রাব পাওয়া মানেই কেবল ডায়াবিটিস নয়, ইউরিক অ্যাসিড বাড়লেও এমন উপসর্গ দেখা দিতে পারে| শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে বার বার প্রস্রাব পাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়| শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিডের কারণে প্রস্রাব থেকে বেরোতে পারে রক্তও| হতে পারে ইউটিআই বা ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশন| ইউরিক অ্যাসিডের সমস্যা বাড়লে প্রস্রাবের সময় অনেকেরই জ্বালা করে| এমনকি এই জ্বালা এতটাই বেশি হয় যে, ব্যক্তিটি প্রস্রাবের বেগ এলেও অনেক সময় করতে চান না| এর থেকে কিডনিতে পাথরও হতে পারে| শরীরে এমন কোনও উপসর্গ দেখা দিলেই সঙ্গে সঙ্গে চিকিত্সকের পরামর্শ নিতে হবে|
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে রক্তে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে আমাদের অতি পরিচিত হলুদ| হলুদে কারমিউমিন নামে একটি বিশেষ যৌগ থাকে যার প্রদাহনাশক গুণ রয়েছে| প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় হলুদ রাখলে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব বলেই ধারণা গবেষকদের| ব্যথার ওষুধ খেলে শরীরে বিভিন্ন রকম পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়| তাই ওষুধের বদলে রোজ কাঁচা হলুদ কিংবা প্রাকৃতিক উপায়ে ও স্বাস্থ্যকরভাবে তৈরি হলুদ গুঁড়ো বেশি মাত্রায় খেয়ে দেখতে পারেন|
কী ভাবে হলুদ খেলে উপকার পাবেন?
১) কাঁচা হলুদ আর মধু : সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ আর মধু খেলে উপকার পেতে পারেন| খেতে সুস্বাদু না হলেও অত্যন্ত স্বাস্থ্যকর|
২) দুধ হলুদ : দুকাপ দুধ ভাল করে ফুটিয়ে নিয়ে তার সঙ্গে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে খেতে পারেন| স্বাদ বৃদ্ধি করতে একটু গোলমরিচ কিংবা কেশর মিশিয়ে নিতে পারেন|
৩) হলুদ চা : চার কাপ জলে এক চা চামচ হলুদ গুঁড়ো মিশিয়ে ভাল করে ফুটিয়ে নিন| এবার একট ঠান্ডা করে নিয়ে ওই মিশ্রণের মধ্যে আদার রস, লেমন জুস আর মধু মিশিয়ে খেতে পারেন|
ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়লে কেমন ডায়েট মেনে চলবেন?
ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকলে কফি, কোল্ড ড্রিংকস, মদ্যপান চলবে না| ধূমপানও বন্ধ করতে হবে| পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, মিষ্টিকুমড়ো, ঢ্যাঁড়স, টমেটোর মতো সবজি এড়িয়ে চলতে হবে| পাশাপাশি, অতিরিক্ত প্রোটিন যেমন- খাসির মাংস, সামুদ্রিক মাছও এড়িয়ে চলুন| বিভিন্ন রকম ডাল খাওয়াও ইউরিক অ্যাসিডের রোগীদের জন্য ভাল নয়| লেৱু, মুসাম্বি, কমলালেৱুর মতো টকজাতীয় ফল, চেরি, কাজু, মাখানা প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখলে এই রোগের হাত থেকে রেহাই মিলতে পারে|