কলকাতা : কলকাতা পুলিশের উপর ভরসা নয়৷ আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-তরুণীর ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় তদন্তভার সিবিআইকে দিল কলকাতা হাইকোর্ট। মঙ্গলবার দুপুর ১টার মধ্যে কলকাতা পুলিশকে ওই সংক্রান্ত কেস ডায়েরি আদালতে পেশ করার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। নির্দেশ-মতো কেস ডায়েরি জমা দেয় কলকাতা পুলিশ। তা খতিয়ে দেখে সন্তুষ্ট হতে পারেনি হাইকোর্ট। উপরন্তু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হতে পারে বলে আশঙ্কা আদালতের। এরপর বিকেলে আরজি কর হাসপাতাল কাণ্ডে তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। কলকাতা পুলিশকে এই সংক্রান্ত যাবতীয় নথি ও সংগৃহীত সব সিসিটিভি ফুটেজ বুধবার সকাল ১০টার মধ্যে সিবিআইয়ের হাতে তুলে দিতে বলেছে আদালত। ২১ দিন পর পরবর্তী শুনানি। সিবিআইকে ওই দিনই তাদের প্রথম রিপোর্ট জমা দিতে বলা হয়েছে।
এদিন শুনানি চলাকালীন কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করে। প্রশ্নগুলি:
- কেন প্রথমে খুনের মামলা নয়?
- ময়নাতদন্তের রিপোর্ট ছাড়াই চিকিৎসক-তরুণীর রক্তমাখা দেহ উদ্ধারের পরও পুলিশ কেন ঘটনাকে আত্মহত্যা বলে চালাতে চেয়েছিল?
- দেহ রাস্তায় পড়েছিল না। কাকে বা কাদের আড়াল করার চেষ্টা করেছে পুলিশ?
- আরজি কর মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ কেন কোনও এফআইআর করেনি?
- ধৃত ব্যক্তির পরিচয় যে সিভিক ভলান্টিয়ার, তা কেন গোপন করতে চেয়েছিল পুলিশ?
এসব গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের পাশাপাশি, কলকাতা হাইকোর্টের বার্তা:
- নিহত নির্যাতিতার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে রাজ্যকে
- আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসা পরিষেবা অব্যাহত রাখতে হবে
- রাজ্য সরকারের আধিকারিকরা চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে পরিষেবা সম্পর্কিত সমস্যার সমাধান করবেন
চিকিৎসক-তরুণীর মৃত্যুর ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্ট সিবিআইকে তদন্তভার তুলে দেওয়ায় খুশি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তিনি জানিয়েছেন, এখন মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ইস্তফাকে পাখির চোখ করে আন্দোলন চলবে।
আরজি কর হাসপাতালের ঘটনায় তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া নিয়ে রাজ্যের কোনও অমত নেই বলে আগেই জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিহত নির্যাতিতার পরিবার চাইলে কেন্দ্রীয় এজেন্সি দিয়েই তদন্ত হতে পারে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। সেই কথা স্মরণ করিয়ে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ সিবিআই তদন্তের বিষয়টিকে আদালতের ব্যাপার বলে এড়িয়ে গেলেও, কলকাতা পুলিশ দক্ষতার সঙ্গে তদন্ত করছিল বলে দাবি করেন।
সোমবারও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নগরপাল বিনীত গোয়েলকে পাশে রেখে বলেছিলেন, রবিবারের মধ্যে কলকাতা পুলিশকে তদন্তের কিনারা করতে হবে। অন্যথায় তদন্তভার সিবিআইকে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু রবিবার পর্যন্ত অপেক্ষার আর অবকাশ রইল না। কলকাতা পুলিশ ও আরজি কর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কার্যক্রমে অসন্তুষ্ট কলকাতা হাইকোর্ট ঘটনার তদন্তে সিবিআইকেই ভরসাযোগ্য বিবেচনা করল।
এদিকে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের সদ্য-প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে নিয়েও শুনানির সময় একাধিক প্রশ্ন ওঠে। ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ পদে তাঁকে বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজ্য সরকারের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে আপাতত ১৫ দিনের ছুটিতে সন্দীপ ঘোষ।








