কলকাতা : আরজি কর হাসপাতালে চিকিৎসক-তরুণীর ধর্ষণ-খুনের তদন্তে সিবিআই। তদন্তের দায়িত্ব নিয়েই আটঘাট বেঁধে নেমেছেন কেন্দ্রীয় তদন্তকারীরা। মূল অভিযুক্তকে হেফাজতে পাওয়ার পরই সিজিও কমপ্লেক্সে সমন্বয় বৈঠকে বসেন সিবিআইয়ের স্পেশ্যাল ক্রাইম ব্রাঞ্চের ডিআইজি। সূত্রের খবর এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দিল্লি থেকে সকালেই কলকাতায় আসেন সিবিআইয়ের বিশেষ দল। বৈঠকে তদন্ত কী ভাবে এগোবে, তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার পরই অ্যাকশন মোডে সিবিআই। আজ আরজি কর হাসপাতালে পৌঁছে যান সিবিআই আধিকারিকরা। সঙ্গে ছিলেন ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা। সেখানেই ঘটনাস্থল ঘুরে দেখেন তাঁরা। নমুনাও সংগ্রহ করেন। সিবিআইয়ের সঙ্গে ছিলেন টালা থানার পুলিশ।
তদন্ত এগিয়ে নিয়ে যেতে নতুন করে খুন সহ ৪টি ধারায় মামলা রুজু করেছে সিবিআই। এই মামলার ভিত্তিতেই তদন্ত করবে তারা। পুলিশের কাছ থেকে হেফাজতে পাওয়ার পর, ধৃত সঞ্জয়কে বিআর সিং হাসপাতালে স্বাস্থ্য-পরীক্ষা করানো হয় সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে।
রহস্যের জট খুলতে মরিয়া কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা। ঘটনার পিছনে কি শুধুই সঞ্জয়? নাকি রয়েছে আরও পাকা মাথা? সিবিআইয়ের মতে, এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে থাকতে পারে নির্যাতিতার মোবাইলে। তাই নির্যাতিতার মোবাইল ফোনের কল হিস্ট্রির উপরই বিশেষ জোর সিবিআইয়ের। ঘটনার দিন কাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন ওই চিকিৎসক তরুণী? কী কথা হয়েছিল তাঁদের মধ্যে? কেউ কোনও দিন তাঁকে হুমকি দিয়েছিল? এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে, মোবাইলের কল ডিটেলস খতিয়ে দেখতে চান সিবিআই আধিকারিকরা। সূত্রের খবর, প্রয়োজনে কল হিস্ট্রি দেখে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হতে পারে নির্যাতিতার একাধিক বন্ধুকে।
সিবিআইয়ের বিশেষ দলে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ছাড়াও রয়েছেন মনরোগ বিশেষজ্ঞ। ধৃত সঞ্জয়ের মোবাইলও পরীক্ষা করে দেখবেন তদন্তকারীরা। সিবিআই আধিকারিকরা মনে করছেন, হাসপাতালের সেমিনার হলে লুকিয়ে রয়েছে অনেক প্রশ্ন। বুধবার আরজি করের চেস্ট ডিপার্টমেন্টের প্রধান অরুণাভ দত্তচৌধুরী জানিয়েছেন, ‘ক্লাস শেষ হলে সেমিনার হল রাত সাড়ে ৮টার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়। ঘটনার দিন ক্লাস হয়েছিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। রাতে সেমিনার হল কে খুলেছে বলতে পারব না।’ এই মন্তব্যের পরই রহস্য বাড়ছে। কারা খুলত এই সেমিনার হল? কাদের যাতায়াত ছিল? ওই হলে বহিরাগতদেরও প্রবেশ অবাধ ছিল কি? অরুণাভ দত্তচৌধুরীর ধোঁয়াশাবৃত বক্তব্যের পর উঠছে এইসব প্রশ্ন।
পুলিশি তদন্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন আরজি করের আন্দোলনকারীরা। প্রমাণ নষ্ট করা হতে পারে, এমনই অভিযোগ তুলেছিলেন আন্দোলনকারী চিকিৎসকরা। সুবিচারের দাবিতে চলছে চিকিৎসকদের আন্দোলন। ভেঙে পড়েছে হাসপাতালের পরিষেবা। অবশেষে হাইকোর্টের নির্দেশে শুরু হয়েছে সিবিআই তদন্ত। এবার কি সুবিচার মিলবে নির্যাতিতার? চেনা ছন্দে কবে ফিরবে রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল? উত্তর খুঁজছেন বঙ্গবাসী।