নয়াদিল্লি ও কলকাতা : নীতি আয়োগের বৈঠক ছেড়ে বেরিয়ে এলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| শনিবার রাষ্ট্রপতি ভবনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সভাপতিত্বে ছিল নীতি আয়োগের বৈঠক| কণ্ঠরোধ করা হয়েছে, এই অভিযোগ তুলে বৈঠক থেকে ওয়াক আউট করলেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী| বৈঠক শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে তিনি বলেন, ”আমাকে পাঁচ মিনিটও বলতে দেওয়া হয়নি| মাইক বন্ধ করে আমাকে অপমান করা হয়েছে|”
বিজেপি বিরোধী I.N.D.I.A জোটের সাত জন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রীয় বাজেটে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে নীতি আয়োগের বৈঠক বয়কট করলেও বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শনিবার সকালে রাইসিনায় হাজির হয়েছিলেন| কিন্তু কিছু ক্ষণের মধ্যেই বৈঠক ছেড়ে রাষ্ট্রপতি ভবনের বাইরে বেরিয়ে আসেন তিনি| অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডু ২০ মিনিট বলার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানান মমতা| তাঁর দাবি, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, গোয়ার মুখ্যমন্ত্রী প্রমোদ সাওয়ন্ত, ছত্তিসগড়ের মুখ্যমন্ত্রী বিষ্ণুদেও সাইও বলার যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছেন| মমতা জানিয়েছেন, এর পরে নীতি আয়োগের আর কোনও বৈঠকে তিনি থাকবেন না| যদিও তাঁর এই দাবি মানেনি কেন্দ্রীয় সরকার| মাইক বন্ধ করার দাবির মধ্যে দিয়ে বিপথে চালিত করা হচ্ছে, এমনটাই জানাল কেন্দ্রীয় সরকার| কেন্দ্রের তরফে ওই দাবির সত্যতা যাচাই করে দেখেছে প্রেস ইনফরমেশন ব্যুরো (PIB)| তাদের দাবি, মমতা বৈঠকে নিজের কথা বলার সময় পেয়েছিলেন| সময় শেষ বলে ঘড়িতে দেখানো হয়েছিল| কিন্তু তাঁকে সতর্ক করতে কোনও ঘণ্টা পর্যন্ত বাজানো হয়নি|
পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য উড়িয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমনও| এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ”মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দিয়েছিলেন| আমরা সকলে তাঁর কথা শুনেছি| উনি সংবাদমাধ্যমে বলেছেন, ওঁর মাইক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে| সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা| প্রত্যেক মুখ্যমন্ত্রীকে সমান সময় দেওয়া হয়েছিল| বাংলার মুখ্যমন্ত্রী এমন অসত্য দাবি করছেন, এটা দুর্ভাগ্যজনক| ওঁর সত্যিটা বলা উচিত|”
প্রসঙ্গত, শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বিমাতৃসুলভ আচরণের অভিযোগ তুলেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়| তাঁর অভিযোগ ছিল, বাজেটে বাংলাকে বঞ্চনা করা হয়েছে| মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছিলেন, বাংলা ভাগের দাবির প্রতিবাদ জানাতেই নীতি আয়োগের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি| তাঁর কথায়, ”বৈঠকে থাকব কিছু ক্ষণ| কিছু বলতে দিলে বলব| আর না হলে প্রতিবাদ করব| বাংলার হয়ে কথা বলব|”
বিজেপি যদিও তাঁর এই অভিযোগকে পূর্বপরিকল্পিত বলে দাবি করেছে| শুক্রবার দিল্লি যাওয়ার আগেই তিনি এই ঘটনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, দাবি গেরুয়া শিবিরের| কেন্দ্রের কংগ্রেস নেতত্ব বিরোধী জোটের কথা ভেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্যের পাশে দাঁড়ালেও, বিজেপির সুরেই সুর মিলিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী| রাহুল গান্ধির জনপ্রিয়তাকে ঈর্ষা করেই এমনটা করেছেন মমতা, মন্তব্য অধীরের| এদিকে কতকটা অধীর চৌধুরীর সুরেই সুর মিলিয়েছেন সিপিআইএম নেতা সুজন চক্রবর্তীও| বিরোধীদের নয়, মোদির হাত শক্ত করতেই কাজ করেছেন মমতা, কটাক্ষ সুজনের|
অন্যদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে এই ব্যবহারকে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে রাজ্যের শাসকদল| বিরোধীদের কণ্ঠরোধ করতে চাইছে কেন্দ্রের বিজেপি নেতৃত্বাধীন সরকার, অভিযোগ রাজ্যের তৃণমূল নেতৃত্বের| পাশাপাশি অসংসদীয় শব্দ ব্যবহার করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন, তীব্র ভাষায় তার প্রতিবাদ করেছেন রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য | প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর শিক্ষা নিয়েও|
উল্লেখ্য, মোদি সরকারের বিরুদ্ধে মাইক বন্ধ করার অভিযোগ এই প্রথম নয়| অতীতে সংসদে একাধিক বার তাঁর মাইক্রোফোন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছিলেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি| এবার অনুরূপ অভিযোগ করলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও| কেন্দ্রীয় বাজেটে রাজ্যের দাবিদাওয়া তথা বিরোধীদের কণ্ঠস্বর হয়ে কথা বলতে গিয়েই কি কণ্ঠরুদ্ধ হতে হল বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে? প্রশ্নটা এখন ঘোরাফেরা করছে রাজ্য তথা জাতীয় রাজনীতির অলিন্দে|