১৮ আশ্বিন ১৪৩১ শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪
১৮ আশ্বিন ১৪৩১ শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪

দামোদর ভ্যালি কর্পোরেশনের বিরুদ্ধে ‘অবিবেচনা’র অভিযোগ মমতার, মোদীকে লেখা চিঠিতে বাংলার প্লাবন-চিন্তা

কলকাতা: ডিভিসির ছাড়া জলে ভাসছে বাংলার একাধিক জেলা। বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করার কথা আগেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শুক্রবার চিঠি দিয়ে সংঘাত আরও স্পষ্ট করলেন মমতা। পরিস্থিতি বিশদে ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘ডিভিসি অপরিকল্পিত ভাবে পাঁচ লক্ষ কিউসেকের বেশি জল ছাড়ার কারণে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সব জেলাতেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর ফলে পূর্ব বর্ধমান, পশ্চিম বর্ধমান, হাওড়া, হুগলি, পূর্ব মেদিনীপুর, পশ্চিম মেদিনীপুর, বীরভূম এবং বাঁকুড়ার মানুষ বিপর্যস্ত। এত জল ডিভিসি আগে কখনও ছাড়েনি। ২০০৯ সালের পর এমন বন্যা হয়নি। ৫০ লক্ষ মানুষ বিপর্যস্ত। চাষের জমি সহ বাসস্থানের ক্ষতি হয়েছে।’

চার পাতার চিঠিতে ডিভিসির বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে সুর চড়িয়েছেন মমতা। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আগামী দিনে ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া চিঠিতে এই বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ম্যান মেড’ বন্যা বলেছেন মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। তাঁর বক্তব্য, ‘ডিভিসির চেয়ারম্যানের সঙ্গে আমি নিজে ফোনে কথা বলেছিলাম। তারপরেও ১৭ তারিখ থেকে জল ছাড়ার পরিমাণ ক্রমাগত বেড়েছে। গত ১০ বছর ধরে ডিভিসিকে বলে আসছি, জলাধারের সংস্কার প্রয়োজন। কিন্তু ডিভিসি বা কেন্দ্রীয় সরকার সে’বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেনি। নীতি আয়োগের বৈঠকেও আমি এ বিষয়ে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিলাম। দুই জলাধারের ধারণক্ষমতা ৩০ শতাংশ কমে গিয়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। বিষয়টিকে আর এড়িয়ে যাওয়া যাবে না।’ রাজ্য যে হিসেব পাঠিয়েছে কেন্দ্রকে, তাতে বলা হয়েছে ১৬ তারিখ রাতে ৯০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়। তার পরবর্তী ৯ ঘণ্টার মধ্যে আড়াই লক্ষ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে মাইথন এবং পাঞ্চেত থেকে। ৩ দিনে জল ছাড়া হয়েছে মোট ৮.৩১ লক্ষ কিউসেক।

‘বার বার অপরিকল্পিত ভাবে জল ছাড়ার ফলে বাংলার ক্ষতি হচ্ছে। ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের জন্যেও আমরা বহু দিন ধরে কেন্দ্রের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছি। প্রয়োজনীয় সমস্ত কাগজপত্র দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র তা-ও কোনও পদক্ষেপ করেনি। ঘাটাল এই বন্যায় সম্ভবত সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে আমরা ডিভিসির সঙ্গে সম্পর্ক ত্যাগ করতে বাধ্য হব। বছরের পর বছর এই বঞ্চনা আমরা মানতে পারব না। আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখুন। অবিলম্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রকে এ বিষয়ে পদক্ষেপের নির্দেশ দিন। বন্যা মোকাবিলায় কেন্দ্র বাংলার জন্য পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ করুক,’ প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যেপাধ্যায়। এরপর আগামীতে কী পদক্ষেপ নেয় কেন্দ্র, এখন সেটাই দেখার।

Scroll to Top