ঝাড়গ্রাম : ঝাড়গ্রামের জামবনি ব্লকের চিহ্নিগড়। ৫৫০ বছরের কনকদূগার মন্দির সেখানকার অন্যতম আকর্ষণ ও ঐতিহ্য। সাধারণত দুর্গা প্রতিমাকে সিংহবাহিনী দশভুজা রূপেই আমরা দেখতে পাই। চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা কিন্তু চতুর্ভুজা এবং অশ্বের উপর বিরাজমানা।
নির্জন অরণ্যের মধ্যে সে যেন ইতিহাসের এক গহন অধ্যায়। এমন এক অধ্যায়, যা শহরে সভ্যতার কাছে এখনও অনেকটাই অজানা। নীলবসনা চতুর্ভুজা দেবী দুর্গা তার কেন্দ্রে। কী? কৌতূহল বোধ করছেন নিশ্চয়ই? বেশ, তাহালে জঙ্গলমহলের ঝাড়গ্রামে নজর রাখি আসুন। নজর রাখলেই নজর আটকে পড়বে সেখানকার অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরে। কথিত আছে, আনুমানিক সাড়ে পচিাশো বছর আগে। দেবীর স্বপ্নাদেশ পেয়ে চিহ্নিগড়ের রাজা গোপীনাথ সিংহ তাঁর রানীর কাঁকন বালা দিয়ে কনকদুর্গার মৃতি গড়ার ব্যবস্থা করেন। আর তুলুং নদী সংলগ্ন গভীর বানানীর মাঝখানে স্থাপিত মন্দিরে প্রতিষ্ঠা করা হয় সেই কনক প্রতিমাকে।
অতীতে বেশ কিছুকাল ব্রাহ্মণ রাজা স্বরূপ ত্রিপাঠী পুজো করেন এই কনকদুর্গাকে। পরে অন্যান্য সামন্ত রাজা দায়িত্ব নেন।
কনকদূর্গা অশ্ববাহিনী ও চার হাত বিশিষ্টা। তাঁর আরাধনার রীতিও আলাদা। দেবীকে সকালে ডিম, দুপুরে মাছ, রাতে অন্নভোগ দেওয়া হয়। প্রতি ভোগের শেষে থাকে পানের আয়োজন। আর একটি বৈশিষ্ট্য হল কনকদুর্গার ‘বিরাম ভোগ’। ৩ কাঠ ছেলে বলির মাংস মশলা সহকারে রন্ধনশালায় রেখে দরজা বন্ধ করে দেওয়ার রীতি চলে আসছে অতীত থেকে। রাত শেষে সেটিই হয়ে ওঠে ‘বিরাম ভোগ’। ভক্তদের বিশ্বাস, এমন বিশেষ ভোগের রান্না নাকি দেবী নিজেই করেন।
প্রতিবছর কনকদুর্গার পুজো দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে মানুষের সমাগম হয়। এখন আরও ভিড়ের সম্ভাবনা। বর্তমান রাজ্য সরকার চিহ্নিগড়কে ঢেলে সাজানোর ব্যবস্থা করেছে। তুলুং নদী, ঘন জঙ্গল, গাছে গাছে জানা- অজানা পাখি, রঙবেরঙের প্রজাপতি এসব তো ছিলই। ছিল না রাত্রিযাপনের বন্দোবস্ত। বর্তমানে তৈরি হয়েছে অতিথিশালা। মন্দির চত্বরকেও সাজিয়ে তোলা হয়েছে প্রশাসনিক উদ্যোগে।