৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২ বৃহস্পতিবার ১৫ মে ২০২৫

জাত্যাভিমানে আঘাত থেকেই জন্ম ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের

কলকাতা : ১৯১১ সালে ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্টকে ২-১ গোলে হারিয়ে প্রথম ভারতীয় দল হিসাবে আই এফ এ শিল্ড জয় করে মোহনবাগান। প্রবল পরাক্রমে খালি পায়ে খেলে ব্রিটিশদের হারিয়েছিল সেদিনের মোহনবাগানের খেলোয়াড়রা। এই জয় সেদিন খেলার মাঠের সীমানা ছাড়িয়ে জাতীয়তাবাদীর জয় হিসাবে উঠে এসেছিল।সেদিনের ১১ জন খেলোয়াড়ের মধ্যে ৮ জনই ছিল আজকের ওপার বাংলার।

উত্তর কলকাতার জোড়াবাগান অঞ্চলেই ছিল জোড়াবাগান ক্লাব। তৎকালীন সেই ক্লাবের সহ-সভাপতি ছিলেন সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী। সুরেশ বাবু ছিলেন পূর্ব বঙ্গের লোক। ফুটবল তার ছিল খুব প্রিয়। ব্যবসায়ী সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী ফুটবলের জন্য খরচ করতেন দুহাত ভরে। জোড়াবাগান ক্লাবের বাকি সদস্যরা ছিলেন উত্তর কলকাতার বনেদী পরিবার। সুরেশ চন্দ্র চৌধুরী পূর্ববঙ্গের মানুষ হওয়ায় অনেকেই তাকে পছন্দ করতেন না। জোড়াবাগান ক্লাবে খেলতে এলেন খেলোয়াড় শৈলেশ বসু এবং নসা সেন। কোচবিহার কাপের খেলায় তাঁদের দলে রাখলেন না অন্যান্য কর্মকর্তারা। কারণ হিসেবে জানা গেল এই দুই খেলোয়াড় ছিলেন পূর্ববঙ্গের লোক। তীব্র প্রতিবাদ জানালেন সুরেশবাবু। তাঁর প্রতিবাদে অবশ্য সেই খেলার ফাইনাল ম্যাচে শৈলেশ বসু এবং নসা সেনকে দলে নেওয়া হল। ফাইনাল ম্যাচে জোড়াবাগান ক্লাব হেরে গেল মোহনবাগানের কাছে।কোপ পড়ল পূর্ব বঙ্গের এই দুই খেলোয়াড়ের উপর। এরই প্রতিবাদে জোড়াবাগান ক্লাবের সঙ্গে সমস্ত সম্পর্ক ছিন্ন করলেন সুরেশ চৌধুরী। তিনি ভেবেছিলেন পূর্ব বঙ্গের সব ফুটবলারকে এক ছাতার তলায় আনবেন।সে সময় মোহনবাগান, টাউন,জোড়াবাগান, ও শোভাবাজার ক্লাবে অনেক পূর্ব বঙ্গের ফুটবলার খেলতেন। কুমোরটুলি পার্কের ছোটদের একটি ক্লাব ছিল।নাম ছিল ক্যালকাটা ইউনিয়ন। সেই ক্লাবকেই ঠিক হল অন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবেন সুরেশ বাবু। ১৯২০ সালের  ১ লা আগস্ট তৈরী করলেন নতুন ক্লাব। নাম দিলেন ইস্টবেঙ্গল। কুমোরটুলিতে রায়বাহাদুর তড়িৎ ভূষণ রায়ের বাড়িতেই খোলা হয় নতুন ক্লাবঘর। সুরেশ বাবুর আদেশ ছিল দলের জার্সি হবে এতটাই উজ্জ্বল যা সবাইকে তাক লাগিয়ে দেবে ।অনেক ঘুরে তৎকালীন সময় ৮০ টাকা দিয়ে কেনা হয় লাল হলুদ রং এর জার্সি।যদিও তখন ঠিক হলুদ ছিল না,ছিল সোনালি রং। সেই সময় ২০-২৫ টাকাতে পাওয়া যেত জার্সি। প্রায় চার গুণ টাকা বেশি দিয়ে এই জার্সি পছন্দ করেছিলেন সুরেশ চৌধুরী।

তারপর কেটে গেছে ১০০ বছরেরও বেশি সময়। এখনও বহমান ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের ঐতিহ্য। বহু খেলোয়াড় তৈরি করেছে ক্লাব। বহু ফুটবলার পরিচিতি পেয়েছে এই ক্লাবের হাত ধরে। এটা একটা শুধু ক্লাবের নাম নয়,সমর্থকদের কাছ আবেগের, লড়াইয়ের নাম ইস্টবেঙ্গল। বিশ্ব জুড়ে কোটি কোটি সমর্থকের কাছে পয়লা আগস্ট শুধু মাসের প্রথম দিন নয়, তাঁদের প্রাণের চেয়ে প্রিয় ক্লাবের জন্মদিন।

প্রতি বছরের মতন এ বছরও ক্লাবের তরফ থেকে আয়োজন করা হয়েছে হয়েছে নানা অনুষ্ঠানের। ভারতীয় ক্রিকেটের প্রাক্তন অধিনায়ক তথা বাঙালির অন্যতম আইকন সৌরভ গাঙ্গুলীর হাতে তুলে দেওয়া হয় ভারত গৌরব সম্মান। প্রাইড অফ বেঙ্গল সম্মান তুলে দেওয়া হয় ক্রিকেটার মহম্মদ শামিকে। জীবনকৃতি সম্মান দেওয়া হয় ইস্টবেঙ্গলের দুই প্রাক্তন খেলোয়াড় রঞ্জিত মুখার্জী এবং প্রশান্ত ব্যানার্জীকে।

দেশভাগের যন্ত্রণা নিয়ে যারা এসেছিলেন এ বঙ্গে তাদের কাছে এক লড়াইয়ের নাম ইস্টবেঙ্গল। যতদিন ভারতীয় ফুটবল বাঁচবে ততদিন উচ্চারিত হবে ইস্টবেঙ্গলের নাম।

 

Scroll to Top