কলকাতা : আরজি কর কাণ্ডে চিকিৎসক-তরুণীকে ধর্ষণ-খুনের ঘটনার প্রতিবাদে মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ চেয়ে নবান্ন অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘পশ্চিমবঙ্গ ছাত্রসমাজ’ নামে সদ্য গজিয়ে ওঠা একটি সংগঠন। ধীরে ধীরে এটা পরিষ্কার হয়ে যায় যে, সংগঠনটির পিছনে এবং ওই কর্মসূচির পিছনেও ভূমিকা রয়েছে বিজেপির। সুতরাং মঙ্গলবারের ‘নবান্ন অভিযান’ যে আদৌ দলীয় রাজনীতির বাইরে নয়, তা বুঝতে কারোরই বিশেষ অসুবিধা হয়নি। কিন্তু সেই কর্মসূচির সঙ্গে শিক্ষানুরাগী বাঙালির আবেগ-জড়িত ‘ছাত্রসমাজ’ অভিধা যুক্ত করে সুবিচার করলেন তো ‘অভিযানে’র কুশীলবরা?
এখন এই প্রশ্ন উঠছে কেন? উঠছে এই জন্য যে, মাঝেমাঝেই এমন রূপ নিয়েছে আজকের ‘নবান্ন অভিযান’, যাতে বাংলার প্রকৃত ছাত্রসমাজ লজ্জিত হতে পারে। বিভিন্ন মিছিল থেকে ধ্বংসাত্মক ক্রিয়াকলাপের কথা যদি বাদও দিই, তাহলেও লজ্জার অবকাশ থেকে যাচ্ছে বই-কি!
হেস্টিংসে তখন বিশৃঙ্খলা তুঙ্গে। জল-কামান চালিয়ে মিছিলকারীদের হঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে পুলিশ। ভিড় থেকে কিছুটা ছিটকে গিয়েছেন কেউ কেউ। তেমনই একজন মধ্যবয়সী ব্যক্তি পুলিশকে লক্ষ করে যা বললেন, তা গোটা অভিযানের উদ্দেশ্যকেই প্রশ্নের মুখে দাঁড় করিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট।
‘নবান্ন অভিযান’ তথা ধর্ষণ-খুনের প্রতিবাদ কর্মসূচি থেকে রাস্তার রেলিঙে উঠে পুলিশকে লক্ষ করে ওই ব্যক্তির হুমকি, ‘পুলিশ তোরা শুনে নে, আজকে এই মেয়ের হয়েছে। কাল তোদের মেয়ের হবে।… কাল তোর মেয়ের দুর্গতি এখানেই হবে।’
তাহলে কি বুঝতে হবে, ধর্ষণের প্রতিবাদও একইরকম নারকীয় উল্লাসে করা যায়? বক্তার শরীরী ভাষা কিন্তু অন্য কোনও নিরীহ অর্থকে আশ্রয় করেনি। সুতরাং ভাবনার বিষয়। বিজেপি কিংবা নবগঠিত ‘ছাত্রসমাজ’ ওই ব্যক্তির দায় ঝেড়ে ফেলতেই পারেন সুকৌশলে। তাতেও কি দীর্ঘকাল ধামাচাপা দেওয়া যাবে এমন প্রকট অসঙ্গতি?