জলপাইগুড়ি: উলুধ্বনিতে মন্দ্রিত ডুয়ার্সের বাতাস| গরুমারা জাতীয় উদ্যানের দক্ষিণ রেঞ্জের ধূপঝোরা বিটে মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান| ধূপধুনো সহযোগে বহু মানুষের সমাগমে কী এমন মাঙ্গলিক অনুষ্ঠান হচ্ছে সেখানে? আপনি হয়ত সময়কাল আন্দাজ করে বলে বসবেন, কী আর, নিশ্চয়ই বিশ্বকর্মা পুজো!
খুব ভুল যে বলবেন, তা নয়| তবে যেমনটা ভাবছেন, এ তেমন চিরাচরিত বিশ্বকর্মা পুজো নয়| ধূপঝোরায় ভক্তি ভরে আরাধনা করা হচ্ছে দেবতা বিশ্বকর্মার বাহনকে| আরও নির্দিষ্ট করে বললে, বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে কুনকি হাতিদের পুজো হচ্ছে সেখানে|
সযত্নে সাজানো হয়েছে কুনকিদের! মুখ জুড়ে আলপনা, তার উপর আবার সিঁদুরের টিপ পরিয়ে দিয়েছেন গৃহবধূরা! আর ভোগের জন্য এলাহি বন্দোবস্ত কত রকমের ফলফলারি! কুনকি হাতিগুলি নিজেদের আরাধ্যা ভেবে এত ভক্তির আয়োজন কতটা কী বুঝছে, তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন| তবে ভোগের বিষয়ে যে তারা যথেষ্ট মনোযোগী, সন্দেহ নেই|
আপনি হাতিভক্ত হলে, আমার কথায় রাগ করলেন হয়ত! আসলে আমি বলতে চাইলাম, হাতির জাগতিক আচরণের কথা| আপনার অতি-জাগতিক দৈব অনুভবের সঙ্গে তার কোনও বিরোধ নেই| বিরোধ নেই ডুয়ার্সের অগণিত মানুষেরও| তাই তো প্রায়শ ঘটে যাওয়া হাতির হানা, কত অনিষ্ট, শত ক্ষয়ক্ষতি ভুলে ফি বছর গজ-উপাসনায় ব্রতী হন তাঁরা|
কুনকিরা অবশ্য অনেক সময় মানুষের বিপদ রুখতে বনকর্মীদের দ্বারা ব্যবহৃত হয়| সে-কারণেও তাদের কদর বেড়েছে নিশ্চয়ই| বেড়েছে পুজোর আয়োজনও| এবছর ধূপঝোরা সহ গরুমারা জাতীয় উদ্যানের ৩টি বিটে বিশ্বকর্মা পুজো উপলক্ষে পুজো পেল কুনকি হাতিরা| সব মিলিয়ে সংখ্যাটা ২৮! বলছিলাম না, ফি-বছরের আরাধনা? ঠিক তাই| তা এমন পুজোর খবর বাংলা জুড়ে না ছড়িয়ে যায়? ছড়িয়েছে তো বটেই, বহুদূর ছড়িয়েছে| তাই তো কলকাতা থেকে সময়-মতো পৌঁছে গিয়েছেন বনিতা ঘোষ| সাড়ম্বর হস্তী-আরাধনা সাক্ষী হতে পেরে রীতিমতো অভিভূত তিনি|
ভালো লাগারই কথা| মন ভালো না হয়ে যায়! কুনকিদের ঘিরে ডুয়ার্সবাসীর এই আবেগ, অনুভতি, উদ্দীপনা ও ভক্তি যে বড় অকৃত্রিম! অরণ্যের সান্নিধ্যে অরণ্যের মতোই অকৃত্রিম|