কলকাতা : আরজি করে বুধবার রাতে প্রতিবাদের নামে হামলা ও ভাঙচুর করতে দেখা যায় কয়েকশো মানুষকে। ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয় ইমার্জেন্সি বিভাগ থেকে ৩টি ফ্লোরের আসবাব। নিরাপত্তাহীনতায় ভুগতে থাকেন ডাক্তার থেকে নার্স। এই ঘটনায় হাইকোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করে মামলা হয় প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম এবং বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চে।
শুক্রবার সেই মামলার শুনানি হয়। হাসপাতালে হামলার প্রসঙ্গে রাজ্যের উদ্দেশে বিচারপতি প্রশ্ন করেন, ‘এসব কী হচ্ছে?’ রাজ্যের তরফ থেকে আইনজীবী জানান, ‘আচমকা প্রায় ৭ হাজার মানুষ হাসপাতালে ঢুকে পড়ে। ভাঙচুর চালায়। পুলিশও সেই হামলায় আহত হয়েছে। তবে মূল ঘটনাস্থলে পৌঁছতে পারেনি হামলাকারীরা।’
এরপরই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলে আদালত। রাজ্যের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য ‘১০০ জনের জমায়েত হলেই পুলিশ নজর রাখে। ৭ হাজার মানুষের জমায়েতে তারা কী করছিল? এত লোকের জমায়েত হল, পুলিশ কিছু জানল না, এটা বিশ্বাস করা কঠিন।’ আদালত আরও বলে, ‘এত বড় ঘটনা। চিকিৎসকরা ধরনা দিচ্ছেন। ১৪৪ ধারা জারির প্রয়োজন ছিল কিনা দেখেছেন? এটা রাজ্য প্রশাসনের সম্পূর্ণ ব্যর্থতা। পুলিশ নিজেদের কর্মীদেরই রক্ষা করতে পারেনি।’
মামলাকারীদের হয়ে সওয়াল ক’রে বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য আদালতে বলেন, ‘আরজি করে হামলার পর পুলিশ কমিশনার বলেছেন, সারা শহর জুড়ে প্রতিবাদ হচ্ছে। আমরা কী করতে পারি?’ এরপর কলকাতা হাইকোর্ট জানতে চায়, ‘যারা হামলা করল, তাদের উদ্দেশ্য কী?’ আরজি কর হাসপাতালে নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়নের আবেদন জানান বিরোধী দলনেতার আইনজীবী।
আরজি কর হাসপাতালে হামলার ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে অসন্তুষ্ট আদালত। রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে আদালতের মন্তব্য, ‘পুলিশ নিজেকে রক্ষা করতে পারছে না। জনতাকে ঠেকাতে পারছে না। তারা আইনশৃঙ্খলা কী ভাবে রক্ষা করবে?’ এরপরই আদালত জানতে চায়, ভবিষ্যতে এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে কী পদক্ষেপ করবে পুলিশ? আরজি কর হাসপাতলে হামলার ঘটনায় কতটা কী ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে সিবিআইকে নির্দেশ দিয়েছে হাইকোর্ট। এদিন প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ ফের আদালতের রোষের মুখে পড়েন। ‘আদালতের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করা’র প্রসঙ্গ টেনে তাঁকে ‘খুবই ক্ষমতাশালী’ হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়। তাঁর প্রতি আদালতের পরামর্শ, ‘বাড়িতে শান্তিতে থাকুন। না হলে বাড়িতে কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করার নির্দেশ দেব।’
সিবিআই তদন্তের পর হাসপাতালে সেমিনার হলের পাশের একটি ঘর ভেঙে ফেলা হয়েছিল। কেন সংস্কারের কাজ শুরু হল? সেই প্রসঙ্গে রাজ্য জানায়, ‘চিকিৎসকদের দাবি মেনে ওই অংশে আর একটি বিশ্রামের ঘর তৈরি করা হচ্ছে। সেই কাজ শুরু হয়েছিল। সেমিনার হল সুরক্ষিত রয়েছে।’ ঠিক তখনই আদালত রাজ্যের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে বলে, ‘সেমিনার হলের কাছের ঘরটি এখনই ভাঙতে হল? এত তাড়াহুড়ো কীসের?’
সেমিনার হল সুরক্ষিত কী? কতদিনে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আরজি করে? বুধবার রাতে হামলার ঘটনায় পুলিশের নিরাপত্তার ব্যবস্থা কী ছিল? সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করার প্রয়োজনীয়তা ছিল কি? কেনই-বা তাড়াহুড়ো করে সেমিনার হলের পাশের ঘর ভাঙতে হল? সবটা জানিয়ে রাজ্যকে হলফনামা জমার নির্দেশ দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানম ও বিচারপতি হিরণ্ময় ভট্টাচার্যের বেঞ্চ। আগামী বুধবার পরবর্তী শুনানি। সেই দিন সিবিআইকে তদন্তের অগ্রগতির রিপোর্ট জমা দিতে হবে আদালতে।






