২ শ্রাবণ ১৪৩২ শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫
২ শ্রাবণ ১৪৩২ শনিবার ১৯ জুলাই ২০২৫

একুশের অতীত, একুশের বর্তমান

High News Digital Desk:

‘সে-দিনের লাঠিই তৈরি করেছে আজকের মাটি।’ এমনটা বলতে পারেন যেকোনও তৃণমূল কর্মী বা সমর্থক। কেননা, ২১ জুলাই মানে, আজকের শাসক দলের কাছে এক ক্ষয়হীন ইতিহাস মনে করা ও মনে করিয়ে দেওয়ার দিন। সেই অর্থে ‘শহিদ দিবস’ রাজনৈতিক হাতিয়ারও বটে। কিন্তু ঠিক কী ঘটেছিল ১৯৯৩ সালের এই দিনে? সংক্ষেপে চোখ বোলানো যাক ঐতিহাসিক দিনটিতে।

বাংলায় তখন বামফ্রন্টের ‘অবিসংবাদিত’ আধিপত্য। মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু। অভিযোগ, রাজ্যবাসীর শত-সহস্র ক্ষোভ ও বীতরাগ সত্ত্বেও বিপুল ভোটে জয়ী হয়েছে সিপিএম সহ শরিক দলগুলি। কংগ্রেসের তরফে দোষারোপ, ভুয়ো ভোটার দিয়ে বেলাগাম ছাপ্পা চালানো হয়েছে নির্বাচনে। স্বচ্ছ নির্বাচনের তাগিদে তারা চায় ভোটারদের সচিত্র পরিচয় পত্র। এটা যে সময়ের কথা, তখনও ভোটার আইডেন্টিটি কার্ডের বালাই ছিল না। ফলে ব্যাপক ছাপ্পা ভোটের অভিযোগ খুব অসঙ্গত ও অস্বাভাবিক ছিল না আদৌ।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তখন রাজ্য যুব কংগ্রেসের প্রবল সম্ভাবনাময় নেত্রী। ভোটারদের সচিত্র পরিচয় পত্রের দাবিতে জুলাইয়ের ২১ তারিখ কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে তিনি রাইটার্স বিল্ডিং অভিযানে প্রবৃত্ত হন।

সে-দিন ব্র্যাবোর্ন রোড সহ কলকাতার বিভিন্ন রাস্তা ধরে রাইটার্সের দিকে এগিয়ে চলছিলেন যুব কংগ্রেস কর্মীরা। শাসক বামফ্রন্ট হয়ে ওঠে রীতিমতো তটস্থ। রাইটার্স বিল্ডিংয়ে জারি থাকা ১৪৪ ধারাই একমাত্র রক্ষা-কবচ তখন শাসকের। মহানগরের একাধিক রাস্তায় চলছিল যুব কংগ্রেসের শান্তিপূর্ণ মিছিল। রাইটার্সে পৌঁছনোর আগে যথারীতি পুলিশের বাধা – লাঠিচার্জ, কাঁদানে গ্যাস। টি-বোর্ড এলাকায় সবচেয়ে মারমুখী হয়ে ওঠে পুলিশ। চলে গুলি। প্রাণ যায় বিক্ষোভকারী যুব কংগ্রেসের ১৩ জন কর্মীর। গুরুতর জখম মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ভর্তি করা হয় হাসপাতালে।

দেশ জুড়ে সেদিন প্রশ্নের মুখে পড়েছিল অভিযুক্ত পুলিশ বাহিনী৷ কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার তুষার তালুকদার খাবি খাচ্ছিলেন ‘অজুহাত’ খুঁজতে। উঠেছিল বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবি। কিন্তু সেদিনের নির্বিকার মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু কার্যত বাহবা দিয়েছিলেন পুলিশকে!

সেই থেকে একটু একটু করে উত্থান মমতার। ক্রমশ যুবনেত্রী থেকে জননেত্রীতে রূপান্তর। ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে কেন্দ্র করেই কংগ্রেস ছেড়ে তৈরি হয় তৃণমূল কংগ্রেস দল। এবং ক্রমশ ২১ জুলাই হয়ে ওঠে তৃণমূলের ‘শহিদ দিবস’।

২০১১-য় রাজ্যে পালাবদল। বাম জমানার পতন। শাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

শাসনভার হাতে নেওয়ার পরও ১৯৯৩-এর রক্তাক্ত স্মৃতি তাড়া করে বেড়িয়েছে মমতাকে। পুলিশের গুলি চালনার ঘটনাকে নিশ্ছিদ্র তদন্তের আওতায় আনেন তিনি। তদন্তে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে, উচ্চপদস্থ পুলিশ আধিকারিকদের শাসকপ্রীতি ও অদূরদর্শিতা, সাধারণ পুলিশকর্মীদের মাত্রা ছাড়ানো সক্রিয়তা ও তোষামোদই ডেকে এনেছিল ২১ জুলাইয়ের মর্মান্তিক অঘটন। নিহত ১৩ জনের পরিবারকে ২৫ লাখ করে অর্থসাহায্যের প্রস্তাবও বাস্তবায়িত হয় পরিণামে।

 

Scroll to Top