কলকাতা : প্রতি বছর ঘুরে ফিরে আসে দিনটা, ২৯ জুলাই| মোহনবাগান দিবস| কিন্তু এই মোহনবাগান দিবসের ইতিহাস কী? শুধু ফুটবল নয়, এই দিনটার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে বাঙালির জাতীয়তাবোধের ইতিহাস| শুধু বাঙালি বললে ভুল হবে, সারা ভারতের মানুষের গর্বে বুক ফুলে উঠেছিল ইংরেজদের বিরুদ্ধে| তারই দৃষ্টান্ত হয়ে রয়ে গিয়েছে এই ২৯ জুলাই| আর সেই ইতিহাসের সাক্ষী শতাব্দীপ্রাচীন মোহনবাগান ক্লাব|
ব্রিটিশ অধিকৃত ভারতের মাটিতে ১৮৮৯ সালের ১৫ অগাস্ট মোহনবাগান ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়| প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন উত্তর কলকাতার ভূপেন্দ্রনাথ বসু| এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার পিছনে ভারতীয় জাতীয়তাবোধ কাজ করেছিল তো অবশ্যই| ১৯০৪ সালে কোচবিহার কাপে অংশগ্রহণ করে মোহনবাগান প্রথম ট্রফি জেতে| তারপর গ্লাডস্টোন কাপ, ট্রেডস কাপ পরপর জয় লাভ করলেও মোহনবাগানের যে জয় ইতিহাস সৃষ্টি করেছিল তা আইএফএ শিল্ড|
সালটা ছিলো ১৯১১, দিনটা ছিলো ২৯ জুলাই| ইস্ট ইয়র্কশায়ার রেজিমেন্ট ফুটবল দলের মুখোমুখি হয়েছিল মোহনবাগান আইএফএ শিল্ড ফাইনালে| সেদিন ইংরেজদের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল একদল খালি পায়ে ফুটবল খেলা বাঙালি| তাঁদের পরনে ছিল সবুজ মেরুন জার্সি আর হৃদয়ে ছিলো ইংরেজদের হারানোর অদম্য ইচ্ছা শক্তি| ভরা শ্রাবণেও সেদিন একটুও বৃষ্টি হয়নি| হাফ টাইমের পরে ইংরেজ ফুটবলারদের স্পাইকের আঘাতে পায়ে গভীর ক্ষত হয়ে ঝরেছিল রক্ত, কিন্তু তাও ব্রিটিশ ব্রিগেড থামাতে পারেনি জেদি বাঙালিদের| শেষ পর্যন্ত তাদের হার মানতে হয়েছিল ১১জন বাঙালির কাছে| খেলা শেষ হয়েছিল মোহনবাগান ২, ইস্ট ইয়র্কশায়ার ১ ফলাফলে| ২৯ জুলাই ১৯১১-র সেই সোনালি বিকেলে এই জয় ছিল পলাশির যুদ্ধের পর ব্রিটিশ-দুর্গে প্রথম কামানদাগা|
মোহনবাগানে খেলা সেদিনের ১১ জন খেলোয়াড় হলেন –
শিবদাস ভাদুড়ি (অধিনায়ক)
বিজয়দাস ভাদুড়ি
অভিলাষ ঘোষ
কানু রায়
হারুল সরকার
নীলমাধব ভট্টাচার্য
রেভারেন্ড সুধীর চট্টোপাধ্যায়
রাজেন সেনগুপ্ত
ভতি সুকুল
মনমোহন মুখোপাধ্যায়
হীরালাল মুখোপাধ্যায়
কবি করুণানিধান বন্দ্যোপাধ্যায় মানসী পত্রিকায় এই জয়ের স্মরণে একটি গান লেখেন| গানটি সেকালে বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছিল
‘জেগেছে আজ দেশের ছেলে পথে লোকের ভিড়
অন্তঃপুরে ফুটলো হাসি বঙ্গ রূপসীর
গোল দিয়েছে গোরার গোলে বাঙালির জিত
আকাশ ছেয়ে উঠেছে উধাও উন্মাদনার গীত’
এরপর থেকে এই ঐতিহাসিক দিনটিকে স্মরণ রেখে শ্রদ্ধা ও ভালবাসার সঙ্গে মোহনবাগান দিবস হিসাবে পালিত হয় প্রতি বছর| স্মরণ করা হয় সেই অমর একাদশের| ২৯ জুলাই বাঙালি ফুটবল প্রেমীদের কাছে শুধুমাত্র একটি দিন নয়, বাঙালির আত্মবিশ্বাসের ও জাতীয়তাবোধের দিনও|